চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

সর্বশেষ:

বাংলাদেশে স্টারলিংকের পরিষেবা : সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ এপ্রিল, ২০২৫ | ১২:৪৫ অপরাহ্ণ

নব্বইয়ের দশকেও দেশের মানুষের কাছে মোবাইল ফোন ছিল রূপকথার গল্পের মতো। কিন্তু ‘চাটগাঁইয়া’ এক প্রফেসরের ‘পাগলাটে’ এক আইডিয়ায় সেই রূপকথার গল্প এখন বাস্তব। তার হাত ধরে ১৯৯৭ সালে যাত্রা করা গ্রামীণফোন এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মোবাইল অপারেটর।

 

দেশের টেলিকম খাতের ‘স্বপ্নদ্রষ্টা’ সেই প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রচেষ্টায় এবার স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হল ঢাকায়। মাত্র ৮ মাস আগে সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেয়া ইউনূসের উদ্যোগে গত বুধবার চালু হওয়া এ পরিষেবার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম জায়গায় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করল দেশ।

 

প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা বলছেন- শুধু উচ্চগতি নয়, গ্রাম ও শহরের মধ্যে চলমান ডিজিটাল বৈষম্য দূর করবে স্টারলিংক। যা বাংলাদেশের ডিজিটাল সম্ভাবনার অনেক নতুন দুয়ার খুলে দেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও স্টারলিংকের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক জরুরি যোগাযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

 

স্টারলিংক ব্যবহারে সুবিধা কী:
অনেক গ্রামীণ ও পার্বত্য অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড বা ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা নেই। স্টারলিংকের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট এসব অঞ্চলে সহজেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে পারে। এতে ডিজিটাল বিভাজন কমবে। নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে ই-কমার্স, অনলাইন ব্যাংকিং এবং রেমিট্যান্স সেবার প্রসার ঘটাবে স্টারলিংক। এছাড়া ই-গভর্ন্যান্স, টেলিমেডিসিনের মতো সরকারি সেবা এবং অনলাইন শিক্ষা কার্যকরভাবে চালু করা সম্ভব হবে।

 

বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে প্রচলিত ইন্টারনেট ও টেলিকম নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ কার্যক্রমে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল, কলেজ এবং মেডিকেল সেন্টারে উচ্চগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করা যাবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল কনসাল্টেশনে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি পাবে।

 

উচ্চগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে রিমোট ওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সিং (আপওয়ার্ক, ফাইভার) এবং আউটসোর্সিং সেক্টর আরও শক্তিশালী হবে। টেক স্টার্টআপগুলো গ্লোবাল মার্কেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। দেশে স্টারলিংকের পরিষেবা চালু হলে স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে, যা ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও গতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

 

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে সীমান্ত ও সমুদ্রপৃষ্ঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা উন্নত করা যাবে। ড্রোন এবং স্মার্ট সিকিউরিটি সিস্টেমে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। স্টারলিংক পরিষেবা চালু হলে দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করা যুবকরা আরও বেশি কাজ করার সুযোগ পাবেন। ঘরে বসে আয় বাড়বে। বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বাজারে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

 

সব মিলিয়ে স্টারলিংকের সংযোগ বাংলাদেশের যুবসমাজ এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলিতে দ্রুত প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। ফলে দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে।

 

স্টারলিংক পরিষেবা কী:
দেশে এখন সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ এনে মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা ইন্টারনেট সেবা দেয়। তবে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা দেয় স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত হাজার হাজার স্যাটেলাইটের সমষ্টি হচ্ছে স্টারলিংক। যা পুরো বিশ্বকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে।

 

স্টারলিংক কীভাবে কাজ করে:
স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা পেতে গ্রাহককে টেলিভিশনের অ্যানটেনার মতো একটি ডিভাইস (যন্ত্র) বসাতে হয়। যা পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। গ্রাহক এই অ্যানটেনার সঙ্গে একটি স্টারলিংকের রাউটার স্থাপন করে ইন্টারনেট সেবা পান। তারের সংযোগ না থাকায় এতে আড়িপাতার সুযোগ থাকে না।

 

স্টারলিংকের গতি কেমন:
ইন্টারনেটের গতি বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওকলা’র হিসাবে, দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড গতি ৪০ এমবিপিএসের কিছু কম। আপলোডের গতি ১৩ এমবিপিএসের মতো। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ডাউনলোড গতি ৫১ এমবিপিএস। যা আপলোডের ক্ষেত্রে ৪৯ এমবিপিএস। তবে স্টারলিংকের ক্ষেত্রে এই গতি ২৩০ এমবিপিএসের বেশি হবে।

 

স্টারলিংক ব্যবহারে চ্যালেঞ্জ কী:
প্রচলিত ইন্টারনেটের চেয়ে স্টারলিংকের পরিষেবায় খরচ কিছুটা বেশি। ভুটানে স্টারলিংকের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছেন গ্রাহকেরা। সেখানে রেসিডেনশিয়াল ফিক্সড ইন্টারনেটের জন্য খরচ পড়ছে প্রতি মাসে ৪ হাজার ২০০ গুলট্রাম। যা বাংলাদেশি টাকায় ৫ হাজার ৮০০ টাকার মতো। এ বাড়তি খরচই স্টারলিংক জনপ্রিয় হওয়ার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট