চট্টগ্রাম শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

আওয়ামী লীগের বিষয়ে ‘সিদ্ধান্ত’ দেওয়ার এখতিয়ার সেনাবাহিনীর নেই: এনসিপি

বিবিসি

২১ মার্চ, ২০২৫ | ১১:৪১ অপরাহ্ণ

“বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে কি পারবে না, এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা বা প্রস্তাবনা দেওয়ার এখতিয়ার সেনাবাহিনী বা অন্য কোনো সংস্থার নেই” বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে মি. ইসলাম বলেন, “এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণ সেই সিদ্ধান্ত নেবে।”

এনসিপি’র অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে যোগাযোগ করেও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

‘ক্যান্টনমেন্ট থেকে’ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা চলছে, বৃহস্পতিবার রাতে এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

তার অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দিনভর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও কৌতূহল তৈরি হয়।

রাতে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেন এনসিপি নেতারা।

প্রথমে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ডের বিচারে ধীরগতির অভিযোগ করেন তিনি।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে মি. ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপারে এত সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক বক্তব্য থাকার পরও বিচারিক প্রক্রিয়ার ধীরগতি অত্যন্ত নিন্দনীয়।”

“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই, বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার করা এমন মন্তব্যের নিন্দা জানান কয়েকদিন আগেই উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরে দল গঠন করা নাহিদ ইসলাম।

তার মতে, আওয়ামীলীগ বর্তমানে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো বাইরে অবস্থান করছে।

“বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার যেকোনো ধরনের আলোচনা ও প্রস্তাব এনসিপি দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করে,” যোগ করেন মি. ইসলাম।

এ সময় কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন তিনি। বলেন, বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।

“গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের সকল সহযোগী ব্যক্তি ও সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে,” বলেন নাগরিক পার্টির এই নেতা।

হাসনাত ক্যান্টনমেন্টে কেন গিয়েছিলেন, প্রস্তাব দিয়েছিল কে?

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন।

সেখানে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাকে ক্যান্টনমেন্টে ডেকে নেওয়া হয়েছিল, নাকি তিনি নিজেই গিয়েছিলেন? এবং অপরপ্রান্তে কারা উপস্থিত ছিলেন?

এর উত্তরে মি. আব্দুল্লাহ বলেন, পাঁচ অগাস্টের পর বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তবে, এগারো তারিখের মিটিংয়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল।

“সেখানে অপরপ্রান্তে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। আমার স্ট্যাটাসে সব স্পষ্ট করা হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

যদিও হাসনাত আব্দুল্লাহ’র স্ট্যাটাসে নির্দিষ্ট কোন পদ বা ব্যক্তির নাম বলা নেই।

সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ আরো বলেন, “ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কথা বলার জন্য আমাদের আহ্বান জানানো হয়েছিলো।”

কী ছিল হাসনাতের স্ট্যাটাসে?

হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে।

বিষয়টিকে তিনি “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” নামে “নতুন একটি ষড়যন্ত্র” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি লিখেছেন, তিনিসহ আরও দুই জনের কাছে গত ১১ই মার্চ দুপুর আড়াইটায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ওই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় এবং তাদেরকে বলা হয়, তারা যেন আসন সমঝোতার বিনিময়ে ওই প্রস্তাব মেনে নেয়।

“আমাদেরকে বলা হয়– ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।”

তিনি দাবি করেছেন, “আমাদেরকে আরো বলা হয়– রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।”

এই প্রস্তাব পাওয়ার পর তারা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করেন বলে লেখেন মি. আব্দুল্লাহ।

হাসনাত আব্দুল্লাহর দাবি বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি বাংলা। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, হাসনাত আব্দুল্লাহ’র স্ট্যাটাসের ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। নিউজ: বিবিসি বাংলা

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট