পবিত্র মাহে রমজান ইসলামী জ্ঞানার্জনের মাস। এ মাসে দিনের বেলায় সাধারণত ব্যস্ততা কম থাকে। চাকুরির সময়সূচিতেও এসে থাকে পরিবর্তন। রমজান মাসে সবাই আমলে সালেহ তথা ভাল কাজে একটু বেশি মনোযোগ দিতে চায়। যে কেউ নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করলে কিংবা মুসলমানি রসম-রেওয়াজ মত জীবন ধারণে আগ্রহী হলে তার জন্য ইসলামী জ্ঞানার্জন ফরজ-অবশ্য কর্তব্য।
যে বিষয় জানা-ই থাকে না, সে বিষয়ে ভাসা ভাসা ধারণার উপর আমল করা ঠিক নয়। কুরআনে কারীমের প্রথম আয়াত ঃ “পড়ুন, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত হতে। পড়–ন, আপনার প্রতিপালক মহা দয়াবান। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না।” (সুরাতুল আলাক ঃ ১-০৫)
হাদীস শরীফে ইসলামী জ্ঞানার্জনের বহু গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল কুরআন তিলাওয়াত, এর ভাবার্থ ও শানে নুযুলসহ অধ্যয়ন করা শ্রেষ্ঠ ইসলামী জ্ঞানার্জন। হাদীস শরীফে এসেছে “কুরআন তিলাওয়াতই হলো সর্বোত্তম ইবাদত। প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর উপর কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানার্জন ফরজ।”
যাদের কুরআন তিলাওয়াত ছহীহ নয়, তারা এ মাসকে কাজে লাগিয়ে তিলাওয়াত ছহীহ করে নিতে পারেন। দেখা যায়, অধিকাংশ মুসলিম ভাই-বোনেরা শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন না। অশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা মারাত্মক গুনাহ। এতে অর্থের বিকৃতি ঘটে, নামাজসহ কোন ইবাদতই আল্লাহর কাছে কবুল হয় না।
কুরআন শরীফে এসেছে, “আর কুরআন তিলাওয়াত কর তারতীল (শুদ্ধ, স্পষ্ট ও সুবিন্যস্ততা) সহকারে”-(সুরা মুযযাম্মিল-০৪)। যার কাছে কুরআন হাদীসের কোন জ্ঞান নেই, সে বড়ই দুর্ভাগা, তার জীবন ব্যর্থ, অসার। দৈনন্দিন জীবনে আমাদেরকে বহু ধর্মীয় সমস্যায় পড়তে হয়, যদি এ ব্যাপারে নিজেরই ইসলামী দৃষ্টিকোণ জানা থাকে তাহলে মুসলমান হিসেবে আত্মপরিচয় স্বার্থক হয়।
প্রথিতযশা ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. তাই যথার্থই বলেছেন “যদি মুসলিম বিশ্বের খাহেশ থাকে, সে নতুনভাবে আবার গোড়া থেকে তার জীবন শুরু করবে এবং অন্যদের গোলামী থেকে মুক্তি লাভ করবে, যদি সে বিশ্বের নেতৃত্ব লাভ করতে চায় তাহলে কেবল শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বশাসিত ও স্বায়ত্বশাসিত হলে চলবে না, তাকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব নিতে হবে এবং এটা খুবই জরুরি আর তা খুব সহজও নয়। এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখার ও চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপকভাবে বই-পুস্তক রচনা করা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ময়দানে নতুনভাবে কাজ শুরু করা। ”
আমরা আশা করছি, মাহে রমজানের বাকী দিনগুলোতে সবাই বিশেষত ইসলামী জ্ঞানার্জন এবং সামগ্রিকভাবে সারা বছর নানাবিধ আধুনিক জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে সচেষ্ট হবেন। আল্লাহ পাক আমাদের তৌফিক এনায়েত করুন। আমিন।
পূর্বকোণ/ইব