ইমান আনার পর একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নামাজ কায়েম করা। নামাজ ছাড়া ইমানের দাবি অমূলক। নামাজ সবসময় বান্দাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। নামাজ ছাড়া শুধু রোজা কেন, কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য হবে না। তাকওয়া বা খোদাভীতির ভিত্তিমূল হলো নামাজ।
রাসুলে আকরাম (সা.) হাদিস শরিফে বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। প্রথম- সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসুল; দ্বিতীয়- নামাজ কায়েম করা; তৃতীয়- জাকাত আদায় করা; চতুর্থ- হজ করা; পঞ্চম- রমজান মাসের রোজা রাখা। (কোন কোন হাদিসে রোজার কথা ৩ নম্বরে বলা হয়েছে।)
নামাজ ইসলাম ধর্মের মৌলিক ইবাদাত। নামাজের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। কোন মুসলমান নামাজ আদায় না করে রোজা ও হজ-জাকাত পালন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আল কোরআনে ইরশাদ করেন, নিশ্চয় নামাজ মুমিনদের উপর ওয়াক্ত মোতাবেক ফরজ করা হয়েছে।
এ বাধ্যতামূলক ইবাদাত নামাজ আদায় না করে সিয়াম সাধনা করা উপবাসেরই নামান্তর। রোজা একটি বিশেষ মাস রমজানুল মোবারকে ফরজ। আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ স্থায়ীভাবে সকল মুমিনের উপর ফরজ। শরিয়তের অন্যান্য আরকান-আহকাম পালন না করে নিছক সামাজিকতা রক্ষা ও আনুষ্ঠানিকতা দেখানোর জন্য রোজা রাখা ঠিক নয়। মিথ্যা, কুকর্ম ও অসামাজিক কাজ থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করে তাকওয়া অর্জনই সিয়াম সাধনার লক্ষ্য। আর কোরআন শরিফে ইরশাদ হয়েছে, নামাজ সকল অশ্লীলতা, অন্যায় ও অসামাজিক কাজ থেকে বান্দাকে বিরত রাখে।
যাবতীয় শরিয়ত বিরোধী কাজকর্ম থেকে বিরত থাকার লক্ষ্য বাস্তবায়ন না হলে রোজা রাখা দিনব্যাপী উপবাসের সমান। রাসুল (সা.) বোখারি শরিফে ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বা কুকর্ম ত্যাগ করে না সে পানাহার পরিত্যাগ করেছে কি করেনি, উপবাস থেকেছে কি থাকেনি আল্লাহ তার খবর রাখার প্রয়োজন মনে করেন না।
অতএব, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দৈনন্দিন ফরজ নামাজ আমাদের পরিবার ও সমাজের সবাইকে নিয়ে অবশ্যই পড়তে হবে। নামাজবিহীন শরিয়তের কোন আমলই কবুল হবে না। তাই নামাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘নামাজ দ্বীন ইসলামের ভিত্তিস্বরূপ’, ‘নামাজ বেহেশতের চাবিকাঠি’, ‘কাফের ও মুসলমানের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ’; অর্থাৎ, মুসলমান নামাজ পড়ে, কাফের নামাজ পড়ে না।
আল কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় নামাজের কথা ৮২ বার বলা হয়েছে। নামাজ প্রতিষ্ঠা না করলে পরকালে কঠোর শাস্তির কথাও উল্লেখ রয়েছে। হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে মর্মে মহানবী (সা.) সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
আসুন, যাদের আগে নিয়মিত নামাজ পড়া হতো না তারা এ রমজানেই নামাজে অভ্যস্ত হয়ে যাই এবং আর কখনও নামাজ ছাড়বো না মর্মে শপথগ্রহণ করি। যেহেতু নামাজ ও রোজা পালনের প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন, সেহেতু অন্যায়, গর্হিত ও অসৎ কাজ থেকে আমাদের সবাইকে চিরতরে বিরত থাকতে হবে।
আর তাই হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ইমানদারীর সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে নামাজ আদায় করে তার অতীত পাপ মার্জনা করা হয়।’ আল্লাহ পাক আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায়ের গুরুত্ব অনুধাবন এবং তাকওয়াভিত্তিক আমলের মাধ্যমে রমজানের রোজা রাখার তৌফিক দান করুন; আমিন।
পূর্বকোণ/ইব