আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা এবং দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা বিবেচনায় পূর্ব-ঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণমিছিলের উদ্দেশে জড়ো হন বাম নেতাকর্মীরা। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গণমিছিল স্থগিত করে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।
তাদের সাত দফা দাবি হলো– দেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নিপীড়ন ও হত্যার বিচার করতে হবে; স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টকে অপসারণ করতে হবে; জুলাই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে; মন্দির-মসজিদ, মাজারে হামলাকারীদের বিচার করতে হবে; চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যার বিচার করতে হবে; সাগর-রুনি, তনু, আফসানা, মুনিয়াসহ আওয়ামী আমলের সব হত্যার বিচার করতে হবে এবং হিন্দু ও আদিবাসীদের ওপর হামলা ও লুটতরাজের বিচার করতে হবে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, আমাদের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। গতকাল থেকে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বলা হয়েছে, আমরা যেন এই কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করি, পালন না করি।মামলার ভয় দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের আজকের সমাবেশ থেকে দাবি জানাই, অবিলম্বে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ আমল থেকে এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। আমরা আগামী দিনে আমাদের লড়াই-সংগ্রাম আরো দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাব।
তিনি বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল শহীদ মিনার থেকে টিএসসি পর্যন্ত। সেই গণ মিছিল স্থগিত করে এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করছি।
সমাবেশের শুরুতে অবশ্য সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন বলেছিলেন, তারা গণ মিছিল করবেন। তিনি বলেন, সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, আছিয়াসহ সকল হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে আজ আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে গণমিছিল করছি।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন জুলাই-আগষ্ট মাসজুড়ে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে বিতাড়ন করা হয়েছে। বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙ্ক্ষায় লাখো মানুষ এই গণ আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। মানুষ আশা করেছিল হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে মানুষ একটা নিরাপদ সমাজ পাবে, পাবে স্বস্তির জীবন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও বারবার আমাদের আশাভঙ্গ ঘটেছে। সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। অভ্যুত্থানের পরপরই বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। মব সন্ত্রাসের নামে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের হত্যা, রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা, চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী হত্যাসহ কোনো অপরাধের বিচার করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমর্থ হয় নাই। সরকারের ব্যর্থতা এবং বিচারহীনতার দীর্ঘ ইতিহাস অপরাধীদের অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। উল্টো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নারী নিপীড়নকারী মব সন্ত্রাসীদের পরোক্ষ সমর্থন অপরাধীদের মনোবল দৃঢ় করেছে।
পূর্বকোণ/পিআর