বর্তমান যুগে চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রতিদিন নিত্য-নতুন পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হচ্ছে যা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। ফলে রোজাদারের রোজা ভঙ্গ হওয়া না হওয়া প্রসঙ্গটিও নতুনভাবে আলোচনায় আসছে। নিম্নে রমজানে বহুল ব্যবহৃত কতিপয় যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পদ্ধতি ও তার শরিয়তি বিধান উপস্থাপন করা হলো।
১.ইনহেলার : ইনহেলার ব্যবহারের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ ইনহেলারের মাধ্যমে কোন জিনিস পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছা প্রায় অসম্ভব এবং ইনহেলার খাবার বা পানীয় পর্যায়ে পড়ে না।
২. এনডোসকপি : এনডোসকপি একটি চিকিৎসাযন্ত্র, যা মুখ গহ্বরের ভিতর দিয়ে পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছানো হয়, যা দ্বারা ভিতরকার ক্ষত উপড়ে ফেলা অথবা তার চিত্র ধারণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এর দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে।
৩. নাকের ড্রপ : নাকের ড্রপ ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ নাসারন্দ্রের সাথে পাকস্থলীর সংযোগ রয়েছে।
৪. এনেসথেসিয়া : এনেসথেসিয়া দু ধরনের। আংশিক অবশীকরণ এবং সম্পূর্ণ অবশীকরণ। ঘ্রাণের মাধ্যমে চীনা আকুপাংচার পদ্ধতিতে বা ইনজেকশান দিয়ে যদি রোজাদারের শরীরের আংশিক ও ক্ষণস্থায়ী অবশ করা হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। আর যদি সম্পূর্ণ শরীর দীর্ঘক্ষণ সময় ধরে অজ্ঞান করে রাখা হয় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
৫. কানের ড্রপ: রোজা অবস্থায় কানে যে কোন প্রকার ড্রপ দিলে অধিকাংশ আলিমদের মতে রোজা ভেঙে যাবে।
৬. চোখের ড্রপ: রোজা অবস্থায় চোখের ড্রপ দিলে রোজা ভাঙবে না। কারণ চোখের ড্রপে যে পরিমাণ পানি ও ওষুধ থাকে তা পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছার আগেই শুকিয়ে যায়।
৭. ইনজেকশন : ইনজেকশন সাধারণত তিন প্রকার : চামড়া, রগ ও পেশিতে ব্যবহৃত ইনজেকশন। চামড়ায় দেয়া ইনজেকশন (ইনসুলিন) এবং পেশিতে দেয়া ইনজেকশানের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে রগে দেয়া ইনজেকশন যাতে খাবার সরবরাহ করা হয় (স্যালাইন) এতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৮. সাবজেটরি : প্রচণ্ড জ্বর কমানোর জন্য অথবা অর্শ রোগের ব্যথা কমানোর জন্য মলদার দিয়ে ঢুকানোর ট্যাবলেট হচ্ছে সাবজেটরি। এটি ব্যবহারে অধিকাংশ আলিমের মতে, রোজা ভঙ্গ হবে না।
৯. রক্ত দান : রোজাবস্থায় অপর কাউকে রক্ত দান করলে ইমাম ইবনে তাইমিয়াসহ অধিকাংশ অলিমের মতে, রোজা ভেঙে যাবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার ফলে বেরিয়ে আসছে রোজার চমৎকার উপকারিতার কথা। রোজা পালন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তো নয়ই বরং রোজা রোগমুক্তির অন্যতম উপায়, সুস্থ হওয়া ও সুস্থ থাকার গ্যারান্টি।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন- ‘‘তোমাদের রোজা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।’’ (সুরা আল-বাকারা, ১৮৭) মানবজীবনে খাদ্য ও পানীয়বস্তু অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেননা খাদ্য ও পানীয় শরীর গঠনের মূল উপকরণ এবং বেঁচে থাকারও উপাদান।
পূর্বকোণ/ইব