চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

বিদ্যুৎ জ্বালানির সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ চায় বিএনপি

অনলাইন ডেস্ক

২ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৬:৫০ অপরাহ্ণ

গণআন্দেলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

এ খাতে সত্যিকার অর্থে টেকসই উন্নয়ন হয়নি মন্তব্য করে দলটি বলেছে, বিদ্যুৎ খাত যেকোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘গত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট ও পাচার’ শীর্ষক বিশ্লেষণ তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি মহাসচিব।

বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যিনি বিগত চারদলীয় জোট সরকারের বিদ্যুও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

টুকু বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে ‘ম্যাজিক’ দেখানোর নামে একটা ‘ব্যবসার’ খাত খুলে বসেছিল।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আইনি পথে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ইচ্ছামত বিদ্যুৎ খাতের চুক্তিগুলো করেছে। জনগণের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার।

কীভাবে চুক্তিগুলো হল সেটি প্রকাশ করা উচিত মন্তব্য করেন ‍টুকু বলেন, “অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হলো জনগণের কাছে এই কন্ট্রাক্টগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া, জনসমক্ষে প্রকাশ করা।”

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (কুইক রেন্টাল) আইন, ২০১০’ বাতিল করে। সে বছর ৩০ নভেম্বর আইন বাতিলের গেজেট প্রকাশ। এ আইনে থাকা ‘দায়মুক্তি’ বিধানও বাতিল করা হয়েছে।

তবে আইনটি বাতিল হলেও এর আওতায় সম্পাদিত চুক্তি বা চুক্তির অধীন গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বৈধভাবে সম্পাদিত বা গৃহীত হবে।

বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপাসিটি চার্জ বা কেন্দ্র ভাড়ার নামে ১৫ বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ‘লুটপাটের’ অভিযোগ তোলা হয়েছে।

দুর্নীতির পরিসংখ্যান চিত্র তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য টুকু বলেন, “বিদ্যুৎখাতে ১৫ বছরে মোট খরচ হল ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হারে তা ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা।

“২০০৮-০৯ অর্থবছরে হয়েছে ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ এ হয়েছে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা।”

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, তার অর্থ হল- বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চলেনি এবং এই টাকা তাদের দেওয়া হয়েছে। এভাবে দেশের মানুষের কাছ থেকে ‘লুট’ করে নিয়ে গেছে।

ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষে থাকা কয়েকটি কোম্পানির নাম উল্লেখ করে সাবেক এই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, অ্যাগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।”

তিনি বলেন, “কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আসে সাধারণত আপদকালীন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। এই প্ল্যান্ট দু্ই বছরের, সেটা ১৫ বছর পর্যন্ত চালাচ্ছে এবং এসব কুইক রেন্টালে ৭৫% বিনিয়োগ করেছে উইথ আউট রিটার্ন। বুঝেন কি অবস্থা।

“ভারত থেকে বিদ্যু আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা।’’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা পুরো বিষয়গুলো রিভিউ করব। এগুলো করার পর যেটা প্রয়োজনীয় সেটা আমরা করব।”

টুকু বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে রিভিউ মানে বাতিল না। আমরা দেখবো যে, কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা ছিল।”

সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দাবি, “আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুতে যেসব উন্নয়ন করা হয়েছে এই বিদ্যুৎ উন্নয়ন টেকসই না, সাসটেইনেবল না। যেকোনো সময়ে মুখ থুবড়ে পড়বে।

“বিদ্যু খাতে দুর্নীতির ধরণ দেখার পর বুঝা যায় যে তারা বিদ্যুৎ খাতকে ফোকলা করে দিয়েছে.. কিছু নাই আরকি।”

তিনি বলেন, “উনারা তো বিল পেমেন্ট করছেন। আমি যতটুকু জানি বকেয়া বেশি নাই.. সবই তো পেমেন্ট করছে এই সরকার এসে। কিন্তু আলমেটলি ২০২৭ সালে এসে ধরা খাবে।

“আমরা মনে করি, এখন যদি আমরা টাইট না করি, তাহলে ২০২৭ সালে আমরা বিপদে পড়ে যাবো। ফরেন এক্সচেঞ্জ ঘাটতি হয়ে যাবে। টাকা ছাপানো হবে, এতে ইনফ্লুয়েশন বাড়বে… বুঝতেই পারেন কি হবে?”

টুকু বলেন, “রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ৫০০ বিলিয়ন ডলার তারা (শেখ হাসিনাসহ তার পরিবার) নিয়ে গেছে। সেটা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে লন্ডনে টিউলিপের (বৃটিশ সাংসদ টিউলিপ সিদ্দিকী -শেখ রেহানার মেয়ে) ব্যাপারে। আরও দুর্নীতি আছে আরকি।”

টুকু বলেন, “এটা তাদের একটা সিন্ডিকেট। ৭১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহকের কাছে তারা মিটার পৌঁছাবে এবং সেখানে বিরাট অংকের একটা দুর্নীতি প্রায় ৩৬ কোটি টাকা পাচার করেছে। ১ হাজার ২৩৫ কোটি অতিরিক্ত খরচ করেছে, এর মধ্যে দুর্নীতি করেছে ৬১৭ কোটি টাকা। মিটার সরবারহ ও স্থাপন, বাস্তবায়নে ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সেটা ১২ হাজার কোটি টাকা করেছে।”

তিনি বরেন, “স্মার্ট প্রিডেইড মিটার প্রকল্প, এর যে নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, এই নেটওয়ার্কটা হচ্ছে কিছু ব্যক্তির নেটওয়ার্ক। যেখানে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনরা আছে। তাতে তারা কোটি কোটি টাকা লাভবান হবে এই প্রকল্পে।”

সাবেক বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কোম্পানিসহ ‘একটি চক্র’ এলএনজি প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি, লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক।

বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে এই খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো, দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নিয়মিত বিদ্যুৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট