চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

নতুন বছরে ‘নতুন বাংলাদেশ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১২:১৬ অপরাহ্ণ

বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারুণ্যের দ্রোহ আর আত্মত্যাগের সাক্ষী ২০২৪ বিদায় নিলো ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে। সাম্যের নতুন বাংলাদেশ গড়ার অপার সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হলো ২০২৫। অগ্নিগর্ভ ২০২৪-এ বাংলদেশ যাত্রা করেছে নতুন গন্তব্যের পথে। দেশের মানুষকে এনে দিয়েছে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’, ‘নতুন এক বাংলাদেশ’।

 

খোল নলচে পাল্টে সেই নতুন বাংলাদেশকে আকৃতি দিতে ২০২৫ জুড়ে চলবে সংস্কারের এক মহাযজ্ঞ। যার অপেক্ষায় পুরো জাতি। তবে তার আগে নতুন বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি কমানো, বিনিয়োগ বাড়ানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা, ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরানোসহ নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

 

এর মধ্যে আবার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। অর্থনীতিতে অস্বস্তি আগেও ছিল, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ বছরের প্রথমার্ধে তা নিদারুণভাবে টের পেয়েছে; আর সরকার পতনের পর বেরুতে থাকা বড় বড় ক্ষতে সংস্কারের প্রলেপ লাগিয়ে স্বস্তি আনার মূল চ্যালেঞ্জের মধ্যে আসছে নতুন বছর।

 

সবার আকাক্সক্ষা অনিয়মের কলঙ্ক থেকে অর্থনীতিকে মুক্ত করে কল্যাণের দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজটি যাতে এবার হয়। মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি গতবছর সাধারণ মানুষকে অসহনীয় অবস্থায় ফেলেছে। নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সবার। নতুন বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম হাতের নাগালে না থাকলেও সহনীয় থাকবে, বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমবে এটাই তাদের প্রত্যাশা। নতুন বছরে সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি চায়।

 

শিল্পায়নের জন্য বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো জরুরি। এটি হলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মিরসরাই শিল্পনগর এ বছর পুরোদমে চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হলে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে এগিয়ে যেতে দেশকে ‘স্মার্ট’ করার নানা প্রকল্প বাস্তায়িত হবে এ বছর। নতুন কারিকুলাম নিয়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাতও এগিয়ে যাবে নতুন লক্ষ্যে।

 

‘রোহিঙ্গা’ সমস্যার সমাধান শিগগির না হলেও এর স্থায়ী সমাধান কী হবে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনগত ঝুঁকিতে থাকা দেশ। তার মধ্যেই নদীদূষণ, দখল, পাহাড় ও গাছ কাটার মতো ঘটনা ঘটছেই। এসব বন্ধেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ রয়েছে নতুন বছরে।

 

নতুন বাংলাদেশ গড়তে সংস্কারের পাশাপাশি ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে’ উত্তরণের জন্য নতুন বছরে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় থাকবে পুরো জাতি। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রজনতার উপর নিপীড়ন আর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারও সম্পন্নের তাগাদা আছে নতুন বছরে। বিপরীতে রাজনৈতিক সহিংসতার শঙ্কাও দেখছেন কেউ কেউ। ২০২৪ এর সব উৎকণ্ঠা কাটিয়ে সঙ্গী হোক স্বস্তি। প্রতিবন্ধকতাকে ঠেলে শুভ হোক ২০২৫। বিদায় ২০২৪। স্বাগত ২০২৫।

 

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা

 

খ্রিস্টিয় নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, নতুন বছরে আমরা দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন একটি সমাজ, সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক মানবিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সঠিক পথের দিশা পাবো। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আত্মত্যাগ, আকাক্সক্ষা ও চেতনার পথ ধরে বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাক নতুন বছরে- এই প্রত্যাশা করি।

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, নতুনের আগমনী বার্তা আমাদের উদ্বেলিত করে, নবউদ্যমে সুন্দর আগামীর পথচলার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়। নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণে অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান সরকার।

 

নতুন বছরে বৈষম্যহীন দেশ গড়ার প্রত্যাশা

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপাচার্য, চবি

 

সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, নাগরিককে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল মত ও বর্ণের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে। আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই, আমরা সবাই দেশকে ভালোবাসি। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য কেউ কেউ সম্প্রীতি বিনষ্ট করেন। এগুলো বাদ দিলে আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন অটুট।

 

২০২৪ সাল অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা আমাদেরকে একটি নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। কোনো জাতির কাছে দেশ গড়ার সুযোগ বারবার আসে না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এমন সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু অনৈক্যের কারণে সেই সুযোগ পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। তবে এবার আমাদেরকে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

 

ছাত্র-জনতার আন্দোলন আমাদেরকে অভূতপূর্ব সমাজ সংস্কার ও রাষ্ট্র মেরামতের সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে। ২০২৫ এ এটিই আমার প্রত্যাশা।

 

দেশ ‘পুনর্গঠনে’ অবদান রাখুক স্বপ্নবাজ তরুণরা

প্রফেসর ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া, উপাচার্য, চুয়েট

 

সবাইকে খ্রিস্টীয় নববর্ষ-২০২৫ উপলক্ষ্যে আন্তরিক শুভেচ্ছা। নতুন বছর আমাদের নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগায়। ছাত্র-জনতার হাত ধরে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাওয়া নতুন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের স্বপ্নের সীমা নেই।

 

নতুন বছরে আমি চাই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন বিগত সময়ের ছাত্ররাজনীতির অসুস্থ ধারা থেকে বের হয়ে একাডেমিক কার্যক্রমেই বেশি মনযোগী হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে নতুন-নতুন গবেষণা ও জ্ঞান চর্চার তীর্থস্থান। দেশের বাছাই করা সবচেয়ে মেধাবী ছেলে-মেয়েগুলোই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে।

 

দেশের স্বপ্নবাজ এসব তরুণরা যেন তাদের মেধার পরিস্ফুটন ঘটিয়ে দেশ পুনর্গঠনে অবদান রাখতে পারে। আগামীর দিনগুলোতে তাদের হাত ধরেই দেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে- সেই প্রত্যাশা করি।

 

নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তব হোক ২০২৫-এ

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান, উপাচার্য, সিভাসু

 

খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০২৫ উপলক্ষ্যে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ! নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা একটি নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছি। তাই বছরটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পরে মানুষের মনোজগতে অনেক উচ্চাশার জন্ম নিয়েছে। সেই প্রত্যাশা পূরণে স্বৈরাচারবিরোধী সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

 

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার নতুনত্ব আনয়নের নামে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। শিক্ষার এ বেহাল দশা থেকে উত্তরণে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিবে- নতুন বছরে এ প্রত্যাশা করছি। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) গুণগত শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। গুণগত শিক্ষা ও গবেষণা কার্যকমের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।

 

আর যাদের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার কারণে আজ আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, বছরের শুরুতে আমি তাদের সকলের প্রতি সম্মান ও গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। নতুন বছর হোক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের বছর!

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট