সচিবালয়কে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করাও এখন জরুরি প্রতীয়মান হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন (বিএএসএ)। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করে সংগঠনটি।
সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিব স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, গত বুধবার দিবাগত রাতে সরকারের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি মন্ত্রণালয়ের অফিসকক্ষে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন ঘটনা। বড় দিনের ছুটির পর রাতে জনমানবহীন অবস্থায় সংঘটিত ঘটনাটি সুপরিকল্পিত মর্মে বিশেষজ্ঞগণের মতামত থেকে প্রতীয়মান হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসররা এখনও কর্মরত রয়েছেন এবং উক্ত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের অনেকের নিকট এখনও সচিবালয়ে প্রবেশের পাস থাকায় তারা সচিবালয়ে অবৈধভাবে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। কাজেই স্বৈরাচারের দোসরদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতা ও প্রবেশের ফলে সংঘটিত ঘটনাটির সঙ্গে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কোন সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি সচিবালয় ঘিরে আনসার বিদ্রোহ এবং বিভিন্ন সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্মানিত উপদেষ্টাগণের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সমর্থিত আত্মগোপনে থাকা অপশক্তি সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় নানা ধরনের অপপ্রচার করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টাও লক্ষ্য করা গিয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় এই ঘটনার পেছনে দেশবিরোধী সেই চক্র জড়িত কিনা সেটিও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সচিবালয়কে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করাও এখন জরুরি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
বিবৃতিতে সংগঠনটি আরও বলে, আমরা আরও লক্ষ্য করছি যে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে অপরিণামদর্শী ও অযৌক্তিক লেখালেখির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা ক্ষেত্রে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াসও চলছে। আমরা এই অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং এহেন কাজ থেকে বিরত থাকাসহ জড়িতদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা দেশের তৃণমূল প্রশাসন থেকে সচিবালয় পর্যন্ত সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী ক্রান্তিলগ্নে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল তখন থেকেই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা মাঠপ্রশাসন ও সচিবালয়ে বিপ্লবী সরকারের এজেন্ডা এবং পলিসি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিএএসএ’র বিবৃতিতে বলা হয়, ভবিষ্যতেও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ সরকারকে স্থিতিশীল রাখতে এবং সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও জনমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণে সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালনে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন প্রত্যাশা করছে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত সচিবালয়ের কার্যক্রম সক্রিয় রাখার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হবে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ