প্রধান উপদেষ্টার তহবিল থেকে বিনা সুদে লাখ থেকে কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে- এমন প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাধারণ মানুষকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এনে জড়ো করেছিল একটি মহল। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর শাহবাগে তাদের বিশাল গণজমায়েতের পরিকল্পনা ছিল।
জানা যায়, রবিবার রাতের প্রথম প্রহর থেকে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষ বাসযোগে ঢাকায় আসতে শুরু করেন। উদ্দেশ্য, বিনা সুদের ঋণ পেতে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ। খবর পেয়ে ছাত্রজনতা-পুলিশ শাহবাগ এবং টিএসসিতে বাসগুলো আটকে দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। শাহবাগ থানায় আটক করা হয়েছে প্রতারক চক্রটির ১০-১৫ জনকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, টাঙ্গাইলের অপেক্ষাকৃত প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষেরাই এই ফাঁদে পা দিয়েছেন। বাসগুলোও এসব এলাকার। বিনা সুদে ঋণ পাওয়ার লোভে তারা এক হাজার টাকা দিয়ে সমাবেশে এসেছেন। বাস ছাড়া মাইক্রোতেও মানুষদের আনা হয়েছে।
এদিকে, ফাঁদে পড়ে বাসে ঢাকায় আসা মানুষদের কাছে মিলেছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের লিফলেট। এতে সংগঠনের আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীনের ছবি ও পরিচয় দেওয়া আছে। এছাড়া সমাবেশের অনুমতি সম্বলিত ডিএমমি কমিশনারের ভুয়া পত্রও তাদের কাছে পাওয়া গেছে।
অভ্যুত্থানের আগে ‘অহিংস আন্দোলন বাংলাদেশ’ নামে এই সংগঠনটি চালাতেন আ ব ম মোস্তফা আমীন। এখন সেটি নতুন নামে এসেছে। মোস্তফা আমীন ফরওয়ার্ড পার্টির আহ্বায়ক। লিফলেটে দেওয়া তার নম্বরে ফোন করে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ফরওয়ার্ড পার্টি নামে একটি সংগঠনের প্রলোভনে পড়ে এই মানুষগুলো ঢাকায় এসেছে। খবর পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিম নেতাগোছের সন্দেহভাজন ১০-১৫ জনকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেছে।
বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে রাজধানীতে মানুষ জড়ো করার পেছনে ষড়যন্ত্রের আভাস দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
সমন্বয়ক ও নয় দফার ঘোষক আব্দুল কাদের বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোক ভাড়া করে ঢাকায় আনা হচ্ছে। রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনসহ শিক্ষার্থীদের উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দাবিতে আগামী কয়েকদিন ঢাকায় আন্দোলন করে অস্থিরতা করার বড় প্ল্যান রয়েছে।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে ঘুরে জনে জনে টাকা দিয়ে গ্রামগঞ্জ থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় নিয়ে আসছে। আর আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কিছুই জানে না? কোনপ্রকার পূর্বপ্রস্তুতিও দেখলাম না! তারা কি আসলেই জানে না, নাকি তারাও এই ষড়যন্ত্রের অংশ? আমরা কোনটা ধরে নেব?
পূর্বকোণ/মাহমুদ