চট্টগ্রাম বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

এইচএসসি পরীক্ষায় শহীদদের কৃতিত্ব

অনলাইন ডেস্ক

১৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে আজ। প্রকাশিত এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হওয়া অনেকেই। কিন্তু আনন্দের এসব খবরে উচ্ছ্বাসের বদলে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে শহীদরের পরিবার, সহপাঠী ও স্বজনদের মধ‍্যে। যাদেরকে নিয়ে আনন্দ উদযাপন করার কথা ছিল তারা আজ নেই, ঘুমিয়ে আছেন কবরে। কিন্তু পৃথিবীতে রেখে গেছেন তাদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর।

 

শহীদ মো. রায়হান

শহীদ মো. রায়হানের মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে গেছে। গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রায়হান। তিনি আজ জিপিএ-২.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। রায়হান নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের আমজাদ হাজী বাড়ির মো. মোজাম্মেল হোসেন ও আমেনা দম্পতির একমাত্র ছেলে। তিনি রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় ফলাফল জানতে পারে তার পরিবার। ফল পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।

 

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বাড্ডায় বিজয় মিছিলে যোগদান করলে গুলিবিদ্ধ হন রায়হান। এরপর ৬ আগস্ট দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন বাড্ডায় একটি বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করতেন। রায়হান পাশেই একটি মেসে থাকতেন।

 

আবু রায়হান

স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হবেন একমাত্র ছেলে সন্তান আবু রায়হান। ছোটবেলা থেকে সেভাবেই তাকে গড়ে তুলেছে তার পরিবার। প্রাথমিক থেকে প্রথম স্থান অধিকারকারী রায়হান দাখিল পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫। সদ্য প্রকাশিত আলিম পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন শহীদ আবু রায়হান। স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও ছুঁতে পারলেন না। কৃতিত্বের সঙ্গে ফলাফলে উত্তীর্ণ হলেও অধরাই রয়ে গেল সেই স্বপ্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ঘাতকদের অগ্নিসংযোগে শহীদ হন আবু রায়হান।

 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফজলে আলম ও রেহেনা বেগম দম্পতির সন্তান আবু রায়হান। বাড়ির পাশের স্কুল থেকে প্রাথমিক শেষ করে উত্তর হরিহরপুর মাদরাসা থেকে দাখিলে জিপিএ-৫ ও আলিমে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন রায়হান। মেধাবী রায়হান ছিলেন পরিবারের একমাত্র বাতিঘর। শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ায় তাকে নিয়ে গর্ব করতেন প্রতিবেশীরা।

 

শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন

বৈষম‍্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন জিপিএ-৪.৮৩ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। শাহরিয়ারের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কুমড়াশাসন উত্তরপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল মতিন। পরিবারের দুই সন্তানের মধ‍্যে শাহরিয়ার ছিল বড়। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

 

জানা যায়, শহীদ শাহরিয়ারের বাবা আব্দুল মতিন স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বতর্মানে ওমরা হজ করতে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তিনি ছেলের ফলাফলের খবর পেয়েছেন। গত ১৮ জুলাই ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরের গোলচত্বরের কাছে গুলিবিদ্ধ হন শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন। তার ডান চোখের পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে মস্তিষ্ক ছেদ করে বেরিয়ে যায়।

 

শাহরিয়ারের পরিবার সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষার মধ্যে বন্ধ পেয়ে ঢাকায় মায়ের কাছে যান শাহরিয়ার। পরে মিরপুর ২ নম্বরে খালার বাসায় বেড়াতে যান। সেখানে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন। পরে মিরপুর ১০ নম্বরের গোলচত্বরের কাছে গুলিবিদ্ধ হন শাহরিয়ার। সেখানে তার খালাতো ভাইও গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। সেদিন একপাশে আন্দোলনকারী অন্য পাশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ ছিল।

 

সাদ আল আফনান পাটওয়ারী

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাদ আল আফনান পাটওয়ারী এইচএসসিতে জিপিএ-৪.১৭ পেয়ে পাস করেছেন। আফনানের মা নাছিমা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আফনানের পাসের খবর আমার জন্য খুশির। কিন্তু খুশি উদযাপন যার সঙ্গে করব, সে তো আমার কাছে নেই। গুলি করে আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমার কোল শূন্য করে দিয়েছে। আফনান লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাঞ্চানগর গ্রামের বাস টার্মিনাল এলাকার মৃত সালেহ আহমেদের ছেলে।

 

লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরি কলেজের অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ বলেন, আফনান ভালো ফলাফল করেছে। এটা আনন্দের। কিন্তু সে তো আমাদের মাঝে নেই। তার ফলাফল শুনে আনন্দিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি, আমাদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে।

 

সবুজ মিয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সবুজ মিয়া এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মঙ্গলবার এইচএসসির প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় শ্রীবরদী সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে সবুজ জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

 

শহীদ সবুজের এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্যের খবরে পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীদের মাঝে আনন্দের পরিবর্তে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শহীদ সবুজ মিয়া শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের রুপারপাড়া গ্রামের আজহার আলীর ছেলে। গত ৪ আগস্ট শেরপুর জেলা শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে শহীদ হন সবুজ মিয়া।

 

নাফিসা হোসেন মারওয়া

এইচএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে নাফিসা জিপিএ-৪.২৫ পেয়ে পাস করেছেন। মেয়ের ফল জানার পর অঝোরে কাঁদছেন চা দোকানি বাবা আবুল হোসেন। তিনি বলেন, মেয়ের যাতে লেখাপড়া নষ্ট না হয়, সে জন্য রান্না করতে দিতাম না। চায়ের দোকান দিয়ে যা দুই টাকা উপার্জন করেছি, মারওয়ার লেখাপড়ায় দিয়েছি। আজ ওর ফল প্রকাশ হলো, কিন্তু মেয়েটা আমার নেই।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সাভারে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নাফিসা হোসেন মারওয়ার। তিনি গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার শাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছিলেন।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট