চট্টগ্রাম শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে হাসপাতালে অফিস করতে বললেন সারজিস আলম

অনলাইন ডেস্ক

১৫ অক্টোবর, ২০২৪ | ৯:৪৮ অপরাহ্ণ

ঢাকার সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) সেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।

 

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে হঠাৎ হাসপাতালটিতে গিয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহত রোগীদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রতিষ্ঠানটির কিছু সেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন তিনি।

 

পরে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের প্রায় অর্ধশত বা তারও বেশি আন্দোলনকারী রোগী, আহত ভাই-বোনেরা ও অসংখ্য রোগী আছে। আমরা ঢাকায় প্রায় হাসপাতালগুলোতে শুনি, সাভার সিআরপিতে পাঠানোর কথা, এটা হলো সিআরপির প্রধান শাখা। এখানে আমরা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু তার আগেই এখান থেকে অনেক অভিযোগ গিয়েছিল আমাদের কাছে, অনেক ছবি ভিডিও আমরা পেয়েছি’।

 

সিআরপির খাবারের মান নিয়ে এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এখানে খাবারের মান নিয়ে সবাই নেগেটিভ রিভিউ দিয়েছে। যেদিন অভিযোগ দেওয়া হয় সেদিন ভালো, তা বাদ দিয়ে যেদিন যার যেমন মন চায় সেভাবে দেয়। আমাদের জায়গা থেকে বলি, এসব ঠিক করতে হবে। রোগীকে রোগীর মতো করে সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’

রোগীদের অস্বাস্থ্যকর ও পরিত্যক্ত কক্ষে সেবা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘আরেকটা যেটা সমস্যা হয়েছে আমরা কিছু বেড দেখেছি, একজন ভাই বলেছেন যে এগুলো পরিত্যক্ত, দুই তিন চার বছর আগে পরিত্যক্ত হয়েছে। তাহলে পরিত্যক্ত কেবিনে কেন আমাদের রোগীরা থাকবে? সেখানে মশার উপদ্রব, খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং নোংরা। ওইটা দেখে মনে হবে, একটা গোডাউন হয়, কিন্তু এইখানে রোগীরা থাকছে। আমরা আসছি এটা শুনে দ্রুত সবকিছু পরিষ্কার করা হচ্ছে স্যাভলন দিয়ে। এটা কি একদিনের জন্য পরিষ্কার রাখার বিষয়, এটাতো ৩৬৫ দিন পরিষ্কার রাখতে হবে’।

 

এ সময় সিআরপির স্টাফদের ব্যবহার নিয়েও কথা বলেন তিনি। এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এখানে যারা স্টাফ ভাই-বোনরা আছেন, তাদের কাছ থেকে আমরা সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করি, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা চাই, যা হয়েছে হয়েছে, আজকের পর থেকে যেন তারা নিজেদের ভাই-বোন মনে করে সেই ব্যবহারটা করেন’।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা (নুরজাহান বেগম) ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবচেয়ে অ্যাকটিভ উপদেষ্টা হওয়া দরকার ছিল স্বাস্থ্য উপদেষ্টার। যিনি অফিসে বসে অফিস করবেন না, হাসপাতালে করবেন। যিনি প্রত্যেকটা হাসপাতালে হাসপাতালে দৌড়ে বেড়াবেন। আমরা ছাত্র, আমাদের আর্থিক সংকট আছে, আমরা চাইলেই একটা গাড়ি সবসময় পাই না, ব্যবস্থা করতে পারি না। চাইলেই সবসময় টাকা ব্যবস্থা করতে পারি না। আমাদের এখানে যারা স্বেচ্ছাসেবী আছে, তারা দিনরাত পরিশ্রম করছে, তাদের পরিবারের মানুষ তাদের ওপর রাগ। তারা পরিবারে থাকে না, বাইরে থাকে তাই রাগারাগি হয়। কিন্তু এই জিনিসগুলো দেখে থাকতে পারে না বিধায় তারা এসেছে। এই কাজগুলো করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই জায়গাগুলোতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন, তারা দৌড়ে বেড়াবেন। আমরা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বারবার বলেছি, তাদের আসলে যতটা অ্যাক্টিভভাবে কাজ করার কথা সেভাবে দেখতে পাই না’।

 

তিনি বলেন, ‘দুই আড়াই মাস হয়ে যাচ্ছে, একজন বলবে তারা সরকারের কোনও আর্থিক সহযোগিতা পায়নি। একটা রাষ্ট্রে একটা মন্ত্রণালয়ের ১০০ কোটি টাকা খুব বড় ব্যাপার? আহত যারা আছে, তাদের যদি এক লাখ করে টাকা দেই, তাহলে কি ১০০ কোটি টাকা লাগবে, তাহলে কেন আমার আহত ভাইরা এই কথা বলবে। যতটুকু সম্ভব, যত দ্রুত সম্ভব প্রতিটি জায়গায় যেতে হবে। যে হাসপাতালে পড়ে আছে, সে তো যেতে পারবে না, তাই আপনাদের যেতে হবে। টিম ভাগ করে দেন। আমাদের দাবি থাকবে, যত দ্রুত সম্ভব অ্যাক্টিভলি তাদের কাছে যেতে হবে। দ্রুত যাতে তাদের কাছে ফান্ড পৌঁছে দেওয়া হয়। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিটি জায়গায় আমাদের ছুটে যেতে হবে। আমরা যেখানে যেতে পেরেছি, কথা বলেছি। যেখানে যেতে পারিনি, সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সবখানে যাব’।

 

সেবার মান নিয়ে সারজিস আলমের এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সিআরপি পাবলিকেশন ও কমিউনিকেশন অফিসার বিজয় রহমান খান বলেন, ‘সারজিস আলম উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে কিছু অভিযোগ করেছেন, আমরা সেগুলো অ্যাড্রেস করছি। বিশেষ করে ক্যান্টিনের খাবারের মান নিয়ে তিনি বলেছেন। আমাদের ক্যান্টিনে সব ইনটেক দ্রব্য কেনা হয়, তাজা মাছ-মুরগি কেনা হয়। এই একই খাবার আমরা স্টাফ, কর্মকর্তারা সবাই খান। তবুও যেহেতু তিনি বলেছেন, আমরা এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকবো। এ ছাড়া পরিত্যক্ত কক্ষে সেবা দেওয়ার যে বিষয়টি রয়েছে এটা আসলে আমরা এভাবেই চিকিৎসা দেই- ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। যেটি হয়েছে যে আমাদের এখানে যখন চারটা বেড খালি হয়েছে, আমরা অন্য হাসপাতাল থেকে চার জন রোগী আমাদের এখানে পাঠাতে বলেছি। কিন্তু সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে সাত জন। যার কারণে রোগীর থাকার জায়গা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। পরে রোগীদের বলেছি যে আসলে আমাদের এখানে এখন বেড নেই, তারা বলেছেন এভাবেই তারা থাকতে রাজি আছেন, তাদের সম্মতিতেই আসলে যেই ঘরগুলো ব্যবহার হতো না, সেগুলোতে আমরা তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছি। এসব করার অন্যতম কারণও কিন্তু সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হতাহতদের চিকিৎসা দেওয়া।

 

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট