চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

পাম তেলের দামে বড় লাফ

লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে ২১ টাকা

আরাফাত বিন হাসান

২ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টনের বেশি। এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি (১৩ লাখ টন প্রায়) চাহিদাই মিটে পাম তেলে। গেল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে উর্ধ্বমুখী এই তেলের দাম। তবে এর আগেই পাম তেলের দামে অস্থিরতা শুরু হয়েছে দেশীয় বাজারে। গেল এক মাসের ব্যবধানে মনপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২০ কেজি) পণ্যটির দাম বেড়েছে ৭৫০ টাকার বেশি। এক মাস আগে মনপ্রতি ৪ হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি হওয়া পাম তেল গত  সোমবার খাতুনগঞ্জে ৫ হাজার ৫৫০ থেকে ৫ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে লিটার প্রতি পণ্যটির দাম বেড়েছে ২১ টাকার বেশি।

 

 

খোদ সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার দর অনুযায়ী খুচরা বাজারে গেল এক মাসে পাম তেলের দাম ১৪ টাকা বেড়েছে লিটারপ্রতি। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগ পর্যন্ত দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি ও বাজারজাতকরণে সক্রিয় ছিল ১১ কোম্পানি। এরমধ্যে ভোজ্যতেলের সিংহভাগই দখলে ছিল এস আলম গ্রুপের। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নানা আর্থিক অনিয়মের তথ্য সামনে আসায় ব্যবসায়িক গ্রুপটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এলসি খোলায়ও নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর এই ব্যবসায়িক গ্রুপের আমদানি নির্ভর ব্যবসাগুলোতে ধস নামে। একের পর এক বন্ধ হতে থাকে নানা কারখানা। চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে যায় ভোজ্যতেলের কারখানাও। এতে ঢাকা নির্ভর হয়ে পড়েছে দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ভোজ্য তেলের বাজার।

 

 

এর বাইরে নাম প্রকাশ না করে একাধিক আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী বলছেন, দেশীয় ব্যংকিং চ্যানেলগুলোতে সংকটের কারণে এলসি খুলতে জটিলতায় পড়ছেন আমদানিকারকরা। এতে কমেছে আমদানির পরিমাণ। অন্যদিকে একাধিক  পাইকারি ব্যবসায়ীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ভোজ্যতেলের দামের সমন্বয় করা হচ্ছে না দেশে। সেই সুযোগে আমদানিকারকরা স্বাভাবিক হারে এসও (সরবরাহ আদেশ) সরবরাহ না করে কৃত্রিমভাবে দাম বৃদ্ধি করছেন পণ্যটির। তবে এলসি জটিলতা বা কৃত্রিম সংকট নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে পাম তেলের দাম বাড়ছে বলে দাবি করেছেন অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক তারিক আহমেদ। তিনি বলেন, ভারতে দিওয়ালী ঘিরে পাম তেলের চাহিদা অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম টনপ্রতি একশ ডলারের চেয়ে বেড়ে গেছে। সেই দামেই আমদানি করতে হচ্ছে আমাদেরও, তাই দাম বাড়ছে।

 

 

মনপ্রতি দেড়শ টাকা বেড়েছে চিনির দাম

 

এদিকে গেল ১৫ দিনে খাতুনগঞ্জে চিনির দাম পাইকারিতে একশ থেকে দেড়শ টাকা বেড়েছে। সোমবার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পাইকারিতে মনপ্রতি ৪ হাজার ৩৮০ থেকে ৪ হাজার ৪৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে চিনি। দুই সপ্তাহর ব্যবধানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ৪৮০ থেকে ৪ হাজার ৫৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। 

 

 

এই বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ডিলার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম একশ থেকে দেড়শ টাকা বেড়ে গেছে। আমদানি নির্ভর পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে আমদানি চলমান রাখতে হয়, কোনো কারণে চেইন ভেঙে গেলে বাজারে প্রভাব পড়ে। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে কোনো কোনো আমদানিকারকের কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এতে দামে প্রভাব পড়ছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট