চট্টগ্রাম বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলা : জনপ্রত্যাশা পূরণই বড় চ্যালেঞ্জ

কাজী খালেদ নিজাম

১০ আগস্ট, ২০২৪ | ১:০৩ অপরাহ্ণ

তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট, সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয় এবং নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার ঘোষণা দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। শুরুটা সরকারি চাকুরিতে কোটা সংষ্কারের আন্দোলন হলেও পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ বেশকিছু ছাত্র মারা গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রূপ নেয় তীব্র গণ আন্দোলনে। দেশজুড়ে বিপুল সংখ্যক ছাত্র, শিশু, নারী ও সাধারন মানুষ নিহত হলে ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠে। দেশেবিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে। দেশের এই ক্রান্তিকালে আবারো এগিয়ে আসে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। ফলশ্রুতিতে দায়িত্ব নিতে হয় সেনাবাহিনীকে। এরপর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশের রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ পেশাজীবী সকলের সাথে আলোচনা করেন। এরপর একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, আমাদের চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান, আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়। সরকারের আকার ১৭ সদস্যের। বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবভনে নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শপথ নেওয়ার পর নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হবে দেশের সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। সব ধরণের সহিংসতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সাধারন মানুষের বাড়িঘরে দুষ্কৃতিকারীদের হামলা বন্ধ করতে হবে। আইনশৃংখলা বাহিনীতে দ্রুত সংষ্কার আনতে হবে। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অপরাধীদের দমন করতে হবে। মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনে ছাত্রহত্যার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত কঠোর শাস্তি নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিকভাবে সহযোগিতার পাশাপাশি তাদের পরিবারের একজন সদস্যকে চাকুরির ব্যবস্থা করা। দুদক, নির্বাচন কমিশনে ব্যাপক সংষ্কার আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। প্রয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাক্রম নিয়ে সাধারন মানুষের দাবি পর্যালোচনা করা। আসলে সমস্যা অনেক কিন্তু সরকারের সময়টা তত ব্যাপক নয়। এজন্য আমি মনে করি সবক্ষেত্রে সংস্কার করতে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সময় দেওয়া দরকার।

 

অর্থনীতি সেক্টরের দুর্নীতি দেশজুড়ে সমালোচিত। যারা এর সাথে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাচারকৃত বিপুল সংখ্যক অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজনীতি ও সংবিধানে সংষ্কারের উদ্যোগ নিতে পারেন নতুন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে নিজেদের উদ্যোগেও দলে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে পারে। পরিহার করতে হবে সব ধরনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। দলের নেতৃত্বে ও কর্মীদের মাঝে চরিত্র গঠন, জবাবদিহিতা, সততা, সহমর্মিতা ইত্যাদি কঠোরভাবে অনুশীলন করতে হবে। মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও অপরাপর রাজনৈতিক দলের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতা খর্বের পাশাপাশি তোষামোদকারীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। সংবিধান জনগণের জন্য। এখানে জনগণের অধিকারকে সমুন্নত রাখার বিধান সংযোজন করতে হবে। বাস্তবতার নিরিখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন দল বা দলবাজ ব্যক্তির অধীনে না করার বিধান সংযোজন করতে হবে। এছাড়াও জাতীয় সংসদসহ সব নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েনের বিধান রাখতে হবে। দলের নীতি আদর্শ চাপিয়ে দেওয়া বা গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের মতো কোন আইন যেন সাংসদরা করতে না পারেন সে ব্যবস্থা করতে হবে। এক ব্যক্তি যেন দু’বারের বেশি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন তারও ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিচার বিভাগকে সম্পূর্নভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। সাধারন মানুষের সঠিক ও ন্যায়বিচার পাওয়ার পথকে সুগম করতে হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার রাজৈনৈতিক দলগুলোর সাথে কার্যকর আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারেন। ছাত্রদের এই মরণপণ লড়াই প্রমাণ করেছে তারা কখনো কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করেনা। যে কোন মূল্যে মানুষের অধিকার আদায়ে প্রস্তুত তারা। কোন ছাত্র আন্দোলনই এদেশে ব্যর্থ হয়নি- যার প্রমাণ ২০২৪ এর এই ছাত্র-গণ আন্দোলন। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আমার আপনার সবার। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবনবাজি রেখে কাজ করে যেতে হবে। দেশের সবক্ষেত্রে স্বচ্ছ্বতা, জবাবদিহিতা ও জনআকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আসুন না সবাই মিলে দেশটাকে গড়ি। মাথা উঁচু করে দাঁড়াই বিশ্ববুকে। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানাই।

কাজী খালেদ নিজাম শিক্ষক ও কলামি

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট