চট্টগ্রাম রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

পানিতে ডুবে মৃত্যুর ৮২ শতাংশই রোধ সম্ভব ৩ সচেতনতায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুলাই, ২০২৪ | ১:৩২ অপরাহ্ণ

তিনটি বিষয়ে সচেতন হলেই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুহার ৮২ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব। এমনটাই জানিয়েছে জাতীয় পর্যায়ে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে গবেষণামূলক কাজ করা সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)।

 

সিআইপিআরবি’র প্রতিরোধমূলক একটি গাইডলাইনে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর এই ঘটনাগুলো ঘটে মূলত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে। তাই সকালের এ সময়ে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক শিশু যত্নকেন্দ্র তৈরি করা। বাড়ির আশপাশে পুকুর-জলাশয় থাকলে তার মধ্যে নিরাপদ বেষ্টনী তৈরি করা। এছাড়া ৬ থেকে ১০ বছরের শিশুদের সাঁতার শেখানো হলে এ মৃত্যু ৯৬ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব।

 

সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন শিশু (১৮ বছর বা তার কম বয়সী) পানিতে ডুবে মারা যায়। এ শিশুদের মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ শিশুর বয়স চার বছরের কম এবং এখনও যাদের সাঁতার শেখার বয়স হয়নি।

 

সিআইপিআরবি’র সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবছর পানিতে ডুবে চার বছরের কম বয়সী শিশু মারা যায় প্রায় ১০ হাজার। দৈনিক হিসেবে গড়ে এ সংখ্যা ৩০ জন। বাড়ির ২০ গজ দূরত্বের মধ্যে কোন ডোবা, পুকুর, খাল, বিল এমনকি শহরে বাথরুমে রাখা বালতির পানিতে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু হয়ে থাকে।
সিআইপিআরবি’র তথ্য অনুসারে, সারাদেশে এক বছরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর মধ্যে সকালে ৩৯৪ জন, বিকেলে ৩৮৮ জন, সন্ধ্যায় ১৫৪ জন এবং রাতে মারা যায় ২০ জন। মৃতদের মধ্যে চার বছরের কম ৩৪৮ জন, পাঁচ থেকে নয় বছরের ৩০৮ জন, নয় থেকে ১০ বছরে ১২০ জন, ১৫ থেকে ১৮ বছরে ৩২ জন এবং ১৮ বছরের বেশি ১৬০ জন মানুষ মারা যান।

 

সিআইপিআরবি’র কমিউনিকেশন ম্যানেজার নাহিদ আখতার দিপা বলেন, আন্তর্জাতিক বিবেচনায় বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অনেক বেশি। পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে থাকে সকাল আটটা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে। যে সময় বাবাসহ বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ সদস্যরা বাড়ির বাইরে থাকেন। বড় ভাইবোনেরা স্কুল-কলেজে যায় এবং মা ব্যস্ত থাকেন রান্নাসহ পরিবারের কাজে। এ সময় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু অনেকটাই অরক্ষিত থাকে। ফলে অল্পসময়ের অসাবধানতায় ঘটে যায় দুর্ঘটনা। যথাযথ তদারকির অভাবেই পানিতে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুদের দক্ষতা ও বিবেচনাবোধ তৈরি হয়। ছয় বছর থেকে স্কুলে যায়, এছাড়াও অনেক শিশু সাঁতার শিখে। ফলে বয়স বাড়ার সাথে সথে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসে।

 

সিআইপিআরবি’র পরিচালক ড. আমিনুর রহমান বলেন, ‘জলে ডুবে শিশুমৃত্যু বাংলাদেশে আর নয়’ প্রতিপাদ্যে নয় বছর ধরে কাজ করছি। পানিতে পড়ে শিশুমৃত্যুহার কমাতে আমরা দেশের সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা, শেরপুর সদর, নরসিংদীর মনোহরদী, চাঁদপুরের মতলব উত্তর-দক্ষিণ, কুমিল্লার দাউদকান্দি, পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন স্থানে আড়াই হাজার ডে-কেয়ার সেন্টারে চার বছরের কম বয়সী ৫০ হাজার শিশু ও ৬-১০ বছর বয়সের সাড়ে ছয় লাখ শিশুকে সাঁতার প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এছাড়া এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সাধারণ মানুষদের সিপিআর ট্রেনিং (পানিতে পড়া শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা) দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৪ হাজার মানুষকে এ ট্রেনিং দিয়েছি। পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক তথ্য প্রচার ও জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে সংযুক্ত করছি। আমাদের এ কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট