সারা দেশে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে গত ৯ জুলাই পর্যন্ত ৬১০টি সর্পদংশন বা সাপে কাটার তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সময় সাপের কামড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৫ জন এবং নারী ৩ জন। দেরি করে হাসপাতালে আসাটাই রোগীর মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে জানায় অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৪১৬ জন রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে বিষধর ৭৩টি এবং ১৮টি চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) সাপে কাটা রোগী। এতে মোট ১১ জন রোগী মারা যান, যার মধ্যে চন্দ্রবোড়ার কামড়ে মারা গেছেন ৫ জন।
বুধবার (১০ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরে রাসেলস ভাইপার বিষয়ে জনসচেতনতার লক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এসব তথ্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চন্দ্রবোড়া ভাইপার ডি- গ্রুপের একটি সাপ, বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়ার অস্তিত্ব এবং এর দংশনে মৃত্যুর ইতিহাস ১৯২০ সালেই স্বীকৃত আছে। ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চন্দ্রবোড়া, অথবা উলুবোড়া সাপের দংশনের প্রথম রিপোর্ট হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে। প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি দেখা গেলেও পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে সাপের বিস্তৃতি ২৭টি জেলায় ছড়িয়েছে।
অন্যান্য জেলায় রাসেলস ভাইপারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের কাছে শুধু রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের তথ্য আছে। অন্যরা কিন্তু তথ্য সেভাবে দিতে পারছে না। কারণ, হয়তো তারা সাপ চেনার ক্ষেত্রে তেমন অভিজ্ঞ না। অন্যান্য জায়গা থেকে তাই তথ্য সেভাবে দিতে পারছে না। তাদের কাছে যে তথ্য আছে, সেগুলো কয়টা বিষধর সাপ, কিংবা কয়টা মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যু তো কোবরার কামড়ে হতে পারে, কেউটার কামড়ে হতে পারে, আবার রাসেলস ভাইপারের কামড়েও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া এ বছর ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে সাপে কাটা তিন রোগীর তথ্য এসেছে, যার মধ্যে একটি ছিল রাসেলস ভাইপারে কামড়ের ঘটনা। রোগী বর্তমানে সুস্থ আছেন।
অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, শুধুমাত্র রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ২০১৩ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ২৩৫ জন রোগীর তথ্য আছে, যারা রাসেলস ভাইপারের কামড়ের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগীদের মধ্যে ৫৩ শতাংশই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই রোগীরা আট ঘণ্টা দেরিতে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। এমনকি সাপে কামড়ানোর ১২ ঘণ্টা পরেও রোগী আসার সংখ্যা অনেক কম। অর্থাৎ অনেক দেরি করে রোগীরা হাসপাতালে এসেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩-২০২৪ সালে মে মাস পর্যন্ত চন্দ্রবোড়া সাপে কাটা ২৩৫ জন রোগী ভর্তি হন এবং তাদের মধ্যে ৬৯ জনের (২৯ শতাংশ) মৃত্যু হয়। বেশির ভাগ রোগী ওঝা ঘুরে সময় নষ্ট করে, দেরিতে হাসপাতালে আসা মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ