চট্টগ্রাম সোমবার, ০৮ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

সবজি রপ্তানি : ঘুরে দাঁড়াতেই হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা

আরাফাত বিন হাসান

৫ জুলাই, ২০২৪ | ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

করোনায় মুখ থুবড়ে পড়া সবজি রপ্তানি খাত সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে এরমধ্যেই দুঃসংবাদ পেলেন এই খাতের রপ্তানিকারকরা। গেল মাসের শেষদিনে এই খাতের প্রণোদনা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শাতংশ করা হয়েছে। সঙ্গে বেড়েছে পরিবহন খরচ। এতেই করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠার শুরুতে এই খাত ফের হোঁচট খেতে পারে বলে শঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা।

 

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৬৪ কোটি মিলিয়ন ডলারের সবজি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। পরের অর্থবছরে করোনার ধাক্কায় প্রায় ২৮ শতাংশ কমে ১১৮ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলারে নামে রপ্তানি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে করোনার সঙ্গে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে আরো প্রায় ১৬ শতাংশ কমে যায় সবজি রপ্তানি। ওই বছর দেশীয় রপ্তানিকারকরা মোট ৯৯ দশমিক ৯১ মিলিয়ন ডলারের সবজি রপ্তানি করেন বিদেশে। পরের বছরও সবজি রপ্তানির এই নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। প্রায় ৩৯ শতাংশ কমে ওই বছর রপ্তানি নেমে আসে ৬১ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলারে। তবে সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তাই দিয়েছে এই খাত। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সবজি রপ্তানি বেড়েছে ৫৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই অর্থবছরের সর্বশেষ মাসের হিসেব যুক্ত হলে শত মিলিয়ন ছড়িয়ে যেতে পারে সবজি রপ্তানির অংক।

 

তবে অর্থবছরের একেবারে শেষ দিনে অনেকটা দুঃসংবাদই পেলেন রপ্তানিকারকরা। ভর্তুকির লাগাম টানতে ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাকি ৪২ খাতের সঙ্গে ১৫ শাতংশ থেকে ৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শাতংশ করা হয় সবজি খাতের প্রণোদনা। আবার সবজি দ্রুত পচনশীল পণ্য হওয়ায় রপ্তানি করা হয় উড়োজাহাজে, এরমধ্যে বাড়ছে উড়োজাহাজের ভাড়া। সব মিলিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে ফের এই খাতের হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

তবে রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ সবজি রপ্তানি হয় মধ্যপ্রচ্যে। সেখানে চাহিদাও প্রচুর। তাজা সবজি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা গেলে সতেজ থাকবে দীর্ঘদিন। এতে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশ থেকেও সহজে সমুদ্রপথে সবজি রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। সমুদ্রপথে সবজি রপ্তানি শুরু হলে বাড়বে রপ্তানির পরিমাণ। তা এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ এমনকি তিনগুণ পর্যন্তও বাড়তে পারে। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম ফ্রেশ ভেজিটেবল এন্ড ফ্রুটস এক্সপ্রোটার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান উদ্দিন বলেন, এখন তো প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। উড়োজাহাজের ভাড়া বেড়েছে। সব মিলিয়ে এখন অবস্থা খারাপ। পাশাপাশি আমাদের দেশে তাজা সবজি সংরক্ষণ পদ্ধতি খুব বেশি উন্নত না। অথচ বাহির থেকে আমদানি করা আপেল-কমলার মতো পচনশীল ফলও দীর্ঘদিন তাজা থাকে। সবজিও এভাবে সংরক্ষণ করা যায়। আমাদের দেশে তাজা সবজি সংরক্ষণ পদ্ধতি উন্নত না হওয়ায় উড়োজাহাজেই বেশি ভাড়া দিয়ে সবজি রপ্তানি করতে হয়।

 

এই রপ্তানিকারক আরও বলেন, ভারত-শ্রীলঙ্কা তাজা সবজি উন্নত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে সমুদ্র্র পথে রপ্তানি করে। এটা বাংলাদেশ থেকেও সম্ভব। তবে এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় জড়িত সব স্তরের লোকজনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত পদ্ধতিতে সবজি সংরক্ষণ প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। এতে রপ্তানি দ্বিগুণের বেশি- এমনকি কয়েক গুণ বাড়বে। কারণ সমুদ্র পথে রপ্তানি হলে খরচ কমবে, নতুন নতুন বিনিয়োগ আসবে এই খাতে।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট