চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

ই-কমার্স দিবস আজ

নির্ভরতা বেড়েছে অনলাইন শপিংয়ে

আরাফাত বিন হাসান

৭ এপ্রিল, ২০২৪ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন আল ইয়াছা ইরফান ও ফারিহা ফাইরুজ দম্পতি। ইরফান ব্যবসায়ী, আর একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন ফারিহা। ব্যবসা আর শিক্ষকতার ফাঁকে স্বশরীরে মার্কেট বা শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটা করার খুব একটা সময় পান না। তাই দুজনের অধিকাংশ কেনাকাটাই সারেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আর ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন পেজ থেকে। এবার ঈদেও বেশকিছু কেনাকাটা অনলাইন থেকেই সেরেছেন এই দম্পতি।

 

শনিবার সন্ধ্যায় ইরফান পূর্বকোণকে জানান, স্ত্রী, মা ও বোনের জন্য নিয়মিতই অনলাইন থেকে কেনাকাটা করেন, পাশাপাশি কাছের কোনো আত্মীয় বা বন্ধুদের জন্য উপহারও অনলাইন থেকে কেনেন তিনি। তবে কেনাকাটার আগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্রেতাদের কেনাকাটার রিভিউ, প্রতিষ্ঠানের ভার্চুয়াল এক্টিভিটিজ, বিশ্বস্ততা এসব ভালো করে দেখে নেন ইরফান। দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক ক্রেতার সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও পাওয়া না গেলেও কোভিড পরবর্তী সময়ে অনলাইন নির্ভরতা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা।

 

এই বাস্তবতায় দেশে আজ ই-কমার্স দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত না হলেও এর গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে দেশের ই-কমার্সভিত্তিক অন্যতম বৃহৎ সংগঠন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর উদ্যোগে প্রায় এক দশক ধরে দিবসটি পালন করে আসছে।

অন্তত এক ডজন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে ২০০৯ সালে অনলাইন লেনদেনের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বছর চারেক পর দেশীয় ব্যাংকগুলো ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের অনুমতি দেয়। এরমধ্যে একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানও যাত্রা করে দেশে। মূলত এর পরের কয়েক বছরের মধ্যে ই-কমার্সের প্রসার ঘটে। ক্রেতা ঠকানোসহ নানা কারণে কোভিডের পূর্ববর্তী সময়ে ই-কমার্স সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয় ক্রেতাদের মনে। তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে বদলে যায় পরিস্থিতি।

 

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বিক্রয়বাজার ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা নুরুন নবী হাসান বলেন, ‘ই-কমার্সের ক্ষেত্রে করোনার একটা বিশাল প্রভাব ছিল। কোভিডের পর থেকে অনলানে বিক্রি প্রচুর বেড়েছে। এখন মানুষ কোনোকিছু কেনার আগে অনলাইনে দেখে। কোভিডের আগে মানুষ অনলাইনকে গুরুত্ব দিতো না, এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। অনলাইন নির্ভরতাও বেড়েছে। এখন এমনও হচ্ছে যে অনলাইনে কেনাকাটা অনেকের প্যাসনে পরিণত হয়েছে।’

অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিবেদক শারমিন সুমি। অনলাইনে কেনাকাটার সুবিধা জানতে চাইলে তিনি জানান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে পছন্দের জামা-কাপড়সহ যে কোনো পণ্য সুবিধাজনক সময়ে কয়েকটা প্লাটফর্মে যাচাই করে দেখা যায়। একই পণ্যের দামের তারতম্যও সহজে জানা যায়, আগের ক্রেতাদের রিভিউ দেখে মান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। তাছাড়া বাচ্চা নিয়ে মার্কেটে মার্কেটে দৌড়াদৌড়ি করার ঝামেলা থেকেও বাঁচা যায়।

 

সবই মেলে ই-কমার্সে

রান্নার হাড়িপাতিল থেকে টাটকা সবজি, পছন্দের জামা-জুতা, সুগন্ধি, প্রসাধনী, বাড়ি ভাড়া কিংবা আস্ত ফ্ল্যাট- সবই মেলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে। অনেকেই মুদি পণ্য কেনা থেকে জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি ভাড়া, সবই করেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এমনকি প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনা কিংবা চিকিৎসা সেবাও মেলে অনলাইনে। পুরোপুরি অনলাইনে নির্ভরশীল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মীর আলতাফ হোসেন সিপন।

 

তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘চাকরি নিয়ে ব্যবস্ততার দরুণ আমি পুরোপুরি অনলাইন নির্ভর। মুদিবাজার, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, মসলা, পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রসাধনী, ওষুধসহ প্রায় সবকিছুর জন্যই অনলাইনে নির্ভর করতে হয় আমার।’

এই বিষয়ে ই কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, ‘ই-কমার্সে বেচাকেনা গত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। এবারও অনেকাংশে বেড়েছে। শুধু জামা-কাপড় নয়, মানুষ তো এখন অনেক কিছুই অনলাইনে কেনাকাটা করে। জীবনধারণের জন্য যা যা প্রয়োজন, মোটামুটি সবকিছুই পাওয়া যায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে। এমনকি পড়াশোনা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ এসবও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঘরে বসেই সম্ভব হচ্ছে এখন।’

ঈদে দ্বিগুণ বিক্রি অনলাইনে

স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদ ঘিরে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বিক্রয়বাজার ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা নুরুন নবী হাসান জানান, সাধারণত তাঁর প্রতিষ্ঠানে গড়ে দৈনিক সাড়ে তিন থেকে চার লাখ অর্ডার হতো। তবে ঈদ ঘিরে দৈনিক আট থেকে ১০ লাখ অর্ডার হচ্ছে এখন।

অনেকটা একই কথা বলেন চট্টগ্রাম ই-কমার্স ফ্যামিলির (সেফ) প্রতিষ্ঠাতা সাগর দে। তিনি বলেন, ‘শপিংমলে গিয়ে দোকানে দোকানে না ঘুরে মানুষ এখন অনলাইনে বাছাই করে কেনাকাটা করতে পছন্দ করে। তাছাড়া ঈদে অনলাইনে কেনাকাটা প্রচুর বেড়েছে এখন। পরিস্থিতি এখন এমন যে আগামী ৫ বছরের মধ্যে লাইফস্টাইল বিষয়ক সবগুলো প্রতিষ্ঠান অনলাইনে আসতে বাধ্য হবে। নয়তো তারা ক্রেতা পাবে না।’

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট