চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ সেই ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস

বিভীষিকাময় রাতের তিপ্পান্ন বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ মার্চ, ২০২৪ | ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। তিপ্পান্ন বছর আগে এই দিনের শেষে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে এসেছিল এক বিভীষিকাময় রাত। বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর। বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে শুরু করে গণহত্যা।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আজ (সোমবার) রাত ১১টা থেকে ১১টা ০১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। এছাড়া এদিন সকাল ১০টায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও গণহত্যা দিবসে শহীদদের স্মরণে আলোক প্রজ্জ্বলন, দুর্লভ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি পালিত হবে।

 

মূলত বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা দমিয়ে রাখার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেছিলেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। গণহত্যার পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি।

 

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় আরো ৩ হাজার লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু হয়েছিল মাত্র। এরপর সমস্ত পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলে মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করে ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হয়। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠে শকুন তাড়িত এক শ্মশান ভূমি।

 

পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল তাতে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’ যা ২য় বিশ^যুদ্ধের পর নৃশংস বড় হত্যাযজ্ঞের একটি।

 

২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট পরিচালনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। তিনি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। ওই রাতে সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।

 

গ্রেপ্তারের আগেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বাান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী:

গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে সকল প্রকার বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে এ বছর গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রামে গণহত্যা দিবসের কর্মসূচি:

গণহত্যা দিবসে শহীদদের স্মরণে ২৫ মার্চ সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নগরীর ফয়েস লেক বধ্যভূমিতে আলোক প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করবে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও দুর্লভ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিশেষ প্রার্থনার আয়োজনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হবে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে।

জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি গণহত্যা দিবসে শহীদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট