চট্টগ্রাম শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গোপসাগরে পরীক্ষামূলক টুনা মাছ ধরার উদ্যোগ মৎস অধিদপ্তরের

অনলাইন ডেস্ক

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১০:২০ অপরাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরের ১.১৯ লাখ বর্গকিলোমিটার এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোন থাকলেও বাংলাদেশ ১০০ মিটার গভীরতায় মাত্র ২৪ হাজার বর্গ কিলোমিটারের চারটি অঞ্চল থেকে মৎস সম্পদ আহরণ করে। ফলে ২০০ মিটার গভীরতায় টুনা এবং সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণ থেকে গেছে অধরা। 

 

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বঙ্গোপসাগরের এক্সক্লুইভ ইকনোমিক জোন (একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল) ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় টুনাসহ অনুরূপ পেলাজিক মাছ ধরা শুরু করার পরিকল্পনা করছে মৎস্য অধিদপ্তর।

 

বঙ্গোপসাগরের ১.১৯ লাখ বর্গকিলোমিটার এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোন থাকলেও বাংলাদেশ ১০০ মিটার গভীরতায় মাত্র ২৪ হাজার বর্গ কিলোমিটারের চারটি অঞ্চল থেকে মৎস সম্পদ আহরণ করে। ফলে ২০০ মিটার গভীরতায় টুনা এবং সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণ থেকে গেছে অধরা। 

 

এই সামুদ্রিক অঞ্চলে কোনো জরিপ না থাকায় টুনা ফিশ আহরণে অন্তত ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েও এই মাছ আহরণ কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। দেশীয় বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী করতে এবার মৎস অধিদপ্তর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে টুনা ফিশ আহরণ এবং জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে।

 

টুনা ফিশ আহরণের পরীক্ষামূলক এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগকারীরা টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে এগিয়ে আসবে–এমনটি আশা করছে মৎস অধিদপ্তর।

সামনের বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীন থেকে ২৪ কোটি টাকায় দুটি জাহাজ আমদানি করে গভীর সাগরে টুনা ফিশ আহরণ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ৩০ জন ক্রু নিয়োগ দেওয়া ও প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানিকতা শেষে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাহাজ দুটির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক টিবিএসকে বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টুনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে ক্যানজাত টুনা আমদানি করা হয়। টুনা ফিশ আহরণের এই প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে সামুদ্রিক মৎস আহরণ খাত তথা ব্লু ইকোনোমিতে নতুন দ্বার উম্মোচিত হবে। জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে টুনা ফিশ রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।”

 

মৎস অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রথমে জুলাই ২০২০ হতে ডিসেম্বর ২০২৩ সময়ে গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়। ৬১ কোটি ৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পের আওতায় তিনটি জাহাজ কেনার কথা থাকলেও ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানান সংকটের কারণে এখন দুটি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, প্রকল্পের মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ব্যয় প্রথমে ৬১ কোটি ৬ লাখ টাকা ধরা হলেও একটি জাহাজ কম কেনায় প্রকল্পের ব্যয় নেমে আসে ৫৫ কোটি ২১ লাখ টাকায়।

 

প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাহাজ না কেনার বিষয়ে গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্পের পরিচালক জোবাইদুল আলম টিবিএসকে বলেন, “ডলার সংকটের কারণে ২০২২ সালের জুলাই থেকে জলযান এবং আকাশযান কেনার বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা এখনো চলমান। তবে সরকারের বিশেষ অনুমোদনক্রমে এই প্রকল্পের অধীনে দুটি জাহাজ কেনা হচ্ছে।”

 

জাহাজ দুটি চীনের ইউনি মেরিন সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড থেকে কেনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

সামুদ্রিক মৎস দপ্তরের তথ্য মতে, ইন্ডিয়ান ওশান অধ্যুষিত অঞ্চলে টুনা ফিশ আহরণ নিয়ন্ত্রিত হয় ইন্ডিয়ান ওশান টুনা কমিশনের অধীনে। এই কমিশনের অধীনে রয়েছে ৩০টি দেশ। বাংলাদেশ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল এই কমিশন এর সদস্যভুক্ত হয়। নিজেদের এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় নিয়মিত টুনা ফিশ আহরণ করে বাংলাদেশের কাছাকাছি অঞ্চলের ভারত, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ।  

 

সামুদ্রিক মৎস দপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ইন্ডিয়ান ওশান টুনা ফিশ কমিশন বাংলাদেশের ফোকাল পার্সন মো. শওকত কবির চেীধুরী টিবিএসকে বলেন, টুনা ফিশ আহরণ করতে দেশের জলসীমার ২০০ মিটার গভীরতায় জরিপ চালানো হবে। এছাড়া ইন্ডিয়ান ওশানের আন্তর্জাতিক জলসীমায়ও টুনা ফিশ আহরণ করা হবে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে।

 

তিনি আরও বলেন, “ইন্ডিয়ান ওশান টুনা কমিশনের সাথে টুনা ফিশ আহরণের বাংলাদেশের হিস্যা কী পরিমাণ হবে, সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে নেগোসিয়েশন চলছে। টুনা ফিশ আহরণে বাংলাদেশকেও উৎসাহ দিচ্ছে কমিশন।” 

 

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট