
নির্বাচন কমিশনকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পরিণতির ভয় দেখিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, এমনও শোনা গেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদেরকে বলা হয়েছে আপনারা যদি আমাদের কথা না শোনেন, সরকারের কথা না শোনেন তাহলে আপনাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পরিণতি হবে। এই ভয় দেখিয়েই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বমহলে এই কথা প্রচারিত আজকে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে নিজের সিংহাসন ধরে রাখার জন্য। জুলুম নির্যাতনের এমন কোনো মাত্রা নেই যেটা তারা গণতন্ত্রগামী মানুষের ওপর নামিয়ে আনছে না। অত্যাচার-নির্যাতনের পৈশাচিকতা দিনদিন নতুন মাত্রায় যোগ হচ্ছে। নিষ্পাপ কিশোর তরুণদেরকে ধরে নিয়ে নিরুদ্দেশ করা হচ্ছে। এ কোন রাষ্ট্র! আমরা কোন দেশে বসবাস করছি। একাত্তরে এত রক্ত এত ত্যাগের বিনিময়ে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই রাষ্ট্রের সন্তানদেরকেই তারা অদৃশ্য করে আনন্দ লাভ করছে। তারা মনে করছে এদেরকে অদৃশ্য করে দিলে আমাদের শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি এগুলো সফল হবে না। কিন্তু এই বিপুল জনতরঙ্গের মধ্যে আপনারা কয়জনকে গ্রেপ্তার করবেন, কয়জনকে অদৃশ্য করে দেবেন?
নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্র সত্তা স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। তারা আবার অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। সরকারের চাপে পড়ে তারা নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছেন। এত মানুষ যারা দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র বঞ্চিত, ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত তাদের দাবিকে উপেক্ষা করে আপনারা কি করে একতরফা নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করলেন? এই তফসিল ঘোষণার জন্য কি আপনি কোনোভাবেই বিবেকের চাপ অনুভব করেননি? আপনার চাকরি রক্ষা করাটাই কি সবচেয়ে বড় বিষয়? মানুষ আপনাদেরকে ধিক্কার জানাচ্ছে এই তফসিল ঘোষণা করার জন্য। মানুষ অত্যন্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে এই তফসিলকে।
তিনি বলেন, সবাই মনে করছে এই নির্বাচন কমিশন একটি পাও ফেলতে পারবে না শেখ হাসিনার কথার বাইরে গিয়ে। শেখ হাসিনার চোখ রাঙানিতে তাদেরকে কাজ করতে হবে। এই আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনারদের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
বিএনপির লড়াই হচ্ছে জনগণের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মন্তব্য করে দলটির মুখপাত্র বলেন, দেশে যে গণতন্ত্র নেই সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যে লড়াই করছি সংগ্রাম করছি, এই লড়াই সংগ্রামের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে এই দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে জনগণের হাতে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে এটাই হচ্ছে আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।
রিজভী আরও বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ হরতাল অবরোধ কর্মসূচি পালন করার জন্য জনগণ আজকে রাস্তায় নেমে এসেছে। এই আধিপত্যবাদী স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয় হবেই ইনশাল্লাহ। জনগণ এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মোট ৪৯০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট মামলা হয়েছে ১২টি, মোট আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৩৭০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।
পূর্বকোণ/এএইচ