রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর ঘিরে নানা জল্পনা কল্পনাও তৈরি হয়েছে। এই সফরের দিকে পশ্চিমা দেশগুলোও সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে বৈশ্বিক রাজনীতিতে প্রবল চাপের মুখে ফেলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়ার ওপর শত শত নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা ধরণের অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। আর এই অবস্থার মধ্যেই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসছেন।
বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে রাশিয়া। এছাড়া রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জাম, খাদ্যশস্য ইত্যাদি আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। তবে রাশিয়ার অনেক জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম আনতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ঢাকা সফরে মস্কোর পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপন করা হতে পারে। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বৈশ্বিক রাজনীতিতে পশ্চিমাদের চাপের মুখে থাকায় এই ইস্যুতে বাংলাদেশের সক্রিয় সমর্থন চাইতে পারেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানিয়েছেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ৭-৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করবেন। সে সমত তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সফরকালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও বিকাশের সম্ভাবনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করা হবে। একই সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মত বিনিময়ের পরিকল্পনাও রয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বুন মোমেন জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের যেসব জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের পর থেকে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা রাশিয়াকে একটা অনুরোধ করতে পারি, দ্রুত যেন একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা যায়।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সক্রিয় সমর্থন, খাদ্য, সার ও জ্বালানির মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানান মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের যে সমস্যা আছে আমরা তুলে ধরব।
বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের রাশিয়ার সক্রিয় সহযোগিতা ও সমর্থনের মাধ্যমে এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরের মধ্যেও রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসেননি। সে দিক থেকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন শেষে জাকার্তা থেকে ঢাকায় আসবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী। একদিন অবস্থানের পর তিনি ঢাকা থেকে দিল্লি যাবেন। গত বছরের নভেম্বরে ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সহযোগিতা জোট- আইওআরএ’র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। তবে হঠাত করেই সেই সফর বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে পুনরায় এই সফর নির্ধারিত হয়।
পূর্বকোণ/পিআর