চট্টগ্রাম বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

কারাভ্যন্তরে বিপ্লবী তারকেশ্বরের ম্যুরাল স্থাপিত হচ্ছে ৯০ বছর পর

নাজিম মুহাম্মদ

৩০ আগস্ট, ২০২৩ | ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

৯০ বছরের মাথায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের নামফলক ও ম্যুরাল স্থাপন করা হচ্ছে। বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগ এ সংক্রান্তে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন। বিপ্লবী তারকেশ্বরের নামফলক ও ম্যুরাল স্থাপনে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। গত ৭ আগস্ট সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপ সচিব তাহনিয়া রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে পুরাতন ফাঁসির মঞ্চের পাশের দেয়ালে মাস্টার দা সূর্যসেনের ম্যুরালের পাশে বিপ্লবী নেতা তারকেশ্বর দস্তিদারের নাম ও ম্যুরাল সংযুক্ত করার বিষয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।

 

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মনজুর হোসেন জানান, কারাগারের অভ্যন্তরে বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের নামফলক ও ম্যুরাল স্থাপনের  অনুমোদন পাওয়া গেছে। বিয়ষটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ বাস্তবায়ন করবে। তারকেশ্বর দস্তিদার ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন। তারকেশ্বরের জন্ম বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলীতে। তাঁর বাবার নাম চন্দ্রমোহন দস্তিদার। বন্ধু মহলে তিনি ফুটু দা নামে পরিচিত ছিলেন।  এ ব্যাপারে চলতি বছরের ২ মার্চ বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে  চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে একটি চিঠি  দেন বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের সভাপতি অঞ্জন কান্তি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক।  চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারী রাত ১২টায়  বীর বিপ্লবী মহানায়ক মাস্টার দা সূর্য সেন ও বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১/১২১-এ ধারায় একই দিনে, একই সময়ে, একই সঙ্গে, একই ফাঁসির মঞ্চে ফাঁসি দেয় বৃটিশ শাসকরা। মৃত্যুদণ্ডের আগে সূর্যসেন  ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ শাসকরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দুইজনের দাঁত ও হাড় ভেঙ্গে দেয়। পরে তাদের অর্ধ মৃতদেহ দুটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। মৃতদেহগুলো স্বজনদের ফেরত দেয়া হয়নি। ভোর হওয়ার পূর্বে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে একটি জাহাজে তুলে মৃতদেহগুলোর সাথে পাথর বেঁধে বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দেয়া হয়।

 

চট্টগ্রামের বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে বিপ্লবী তারকেশ্বরের স্থান ছিলেন সপ্তম। বৃটিশ শাসকরা তাঁকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দেয়ার জন্য ১০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। ১৯৩৩ সালের ১৯ মে গহিরার পূর্ণ তালুকদারের বাড়ি থেকে ইংরেজ বাহিনীর হাতে বন্দী হন তারকেশ্বর।

 

ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে বিপ্লবীদের ইতিহাস তুলে ধরতে বাংলাদেশ সরকার বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্য সেন ও বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির মঞ্চটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসাবে চট্টগ্রাম কারাগারের অভ্যন্তরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু একই মঞ্চে দুইজনের ফাঁসি কার্যকর হলেও চট্টগ্রাম কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা ফাঁসির মঞ্চে মাস্টার দা সূর্যসেনের নাম ও ম্যুরাল রয়েছে। কিন্তু  বিপ্লবী তারকেশ্বরের ম্যুরাল ও পাথর লিপিতে নাম লিপিবদ্ধ নেই। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি রাত ১২টায় মাস্টার দা সূর্যসেন ও বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারকে একই সময় ফাঁসি দেয়ার বিষয়টি ১৭টি বইতে লিপিবদ্ধ রয়েছে বলেও জানানো হয়।

 

চিঠি পাবার পর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগকে অবহিত করেন।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট