বিএনপি আজ ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, আমরা বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখেছি, তারা রাস্তায় অবস্থান করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে সমস্ত যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছেন।
শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন প্রশ্ন রাখেন। এর আগে তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হয়ে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল তারা একটি বড় কর্মসূচি দিয়েছিল। তার আগেও সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের এনে জড়ো করেছিল। রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি পালন করবে এখানে সরকারের কোনও বাধা নেই। তবে যখন কেউ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, জানমালের ক্ষতি করবে, কাউকে মারার চেষ্টা করবে, হত্যা করবে ও গাড়ি ভাঙচুর করবে তখন নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।’
তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে, অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩১ জন পুলিশ সদস্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরও কয়েকটি হাসপাতালে আহত কয়েকজন পুলিশ সদস্য চিকিৎসা নিয়েছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি মেহেদির ওপর বৃষ্টির মতো ঢিল ছোঁড়া হয়। কিন্তু তার বদলে যে একটা রিভেঞ্জ নেওয়া, সেটি কিন্তু তিনি বা পুলিশ করেনি। নীরবে তারা সহ্য করেছেন এবং তাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করেছেন।’
কামাল বলেন, ‘বিএনপি ২০১৪-১৫ সালে ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিল।’ আজ সহিংসতার ঘটনার পর বিএনপি আবারও সেই অগ্নিসন্ত্রাসে ফিরে যাচ্ছে কিনা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে অরাজকতা ও জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গতকাল দেখা গেছে বিএনপির সমাবেশ থেকে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময় দেখেছি পুলিশ কখনও তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পিছনে ফেরে না। নিহত হবে নাকি আহত হবে এসব বিষয়ে পুলিশ ভাবে না। জঙ্গি দমন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা তা দেখেছি। আজও পুলিশ বীরত্বের সঙ্গে সন্ত্রাস মোকাবিলা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অগ্নিসন্ত্রাস থেকে মানুষসহ জীবজন্তুরাও রক্ষা পায়নি। এর কারণে মানুষ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বিগত ২০১৪-১৫ সালে দেখেছি অগ্নিসন্ত্রাসে অগ্নিদগ্ধদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হয়েছেন একটি হাসপাতাল করতে। এত পরিমাণ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন যার কারণে একটি হাসপাতাল করতে হয়েছিল। আজকের ঘটনা আমাদের সেই স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুক্ষণ আগে বিএনপির এক নেত্রী নিপুন রায়ের ফেসবুকের একটি অডিও শুনেছি। তিনি বলছেন- তোমরা আগুন ধরাও, এগুলো আমাদেরকে দেখাতে হবে। জায়গা মত দেখাতে হবে, জায়গাটা কোনটা সেটা তিনি নিজেই জানেন। দাও দাও করে আগুন জ্বালানোর হুকুম তিনি দিচ্ছেন। সব জায়গা থেকে বিএনপির নেতারা এ ধরনের কাজের জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। আমরা এটার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি।’
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বটা পালন করবেন। এটা যেমন সত্য সে রকমভাবে আমি আহ্বান করবো, তারা যেন ২০১৪-১৫ এর মত জ্বলাও পোড়াওয়ের যে নৃসংশতা ঘটিয়েছিল তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। এগুলো ঘটালে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীসহ এই দেশের মানুষ কেউ সহ্য করবে না।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ