যে কোনো সৃষ্টিশীল কর্মের ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক, আর্থিক স্বীকৃতি এবং সুরক্ষায় কপিরাইট আইনের বিকল্প নেই। দেশের বিদ্যমান কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে এতদিন কপিরাইট অফিসের কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না।
কিন্তু কপিরাইটের সংশোধিত আইনে এ বিষয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে আইনের লঙ্ঘন হলে কপিরাইট অফিসের পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকছে। কপিরাইটের এ সংশোধিত আইনটি এখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে বলে কপিরাইট অফিস সূত্রে জানা গেছে।
কপিরাইট রেজিস্ট্রার মো. দাউদ মিয়া বলেন, বিদ্যমান কপিরাইট আইনে প্রয়োগের দিক থেকে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। কপিরাইট অফিস কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। সেক্ষেত্রে সংশোধিত আইনে এই বিষয়টি বেশ ভালোভাবে যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় আইন লঙ্ঘনে শাস্তির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে জরিমানা ৩ লাখ টাকা ছিল, সেখানে সংশোধিত আইনে জরিমানার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
গানের কপিরাইট নিয়ে জটিলতা কাটেনি: সংশোধিত আইনেও সংগীত সৃষ্টির কপিরাইট নিয়ে পুরোপুরি জটিলতা কাটেনি। সংশোধিত আইনের খসড়ায় সংগীত সৃষ্টির প্রণেতা হিসাবে কপিরাইট অফিস থেকে সুরকার এবং গীতিকার দুপক্ষের কথাই উল্লেখ করা হয়। সেখান থেকে যখন এটি লেজিসলেটিভ, আইন শাখায় গেছে তখন তারা কিছু পরিবর্তন এনেছে। তারা প্রস্তাব দিয়েছেন, সংগীতের প্রণেতা শুধু সুরকার। গীতিকার হবেন গীতিকবি হিসাবে সাহিত্যকর্মের প্রণেতা। এ যুক্তিতে তারা বেশ কঠোর অবস্থানে ছিলেন। পরে সংগীতের নানা মহল থেকে দাবি তোলা হলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়। এ বিষয়ে কপিরাইট রেজিস্ট্রার বলেন, স্ট্যান্ডিং কমিটি এটি সংশোধন করতে বলেছে। কিন্তু আমরা সময় পার হয়ে যাওয়ার কারণে কাজটি করতে পারিনি। এ বিষয়ে আমাদের সুপারিশ ছিল, এটি যখন স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে, তখন তারা বিষয়টি পরিবর্তন করতে পারবেন। সংশোধন করলে সেভাবে পাশ হবে। তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটি হয়তো এ বিষয়ে তাদের মতামত দেবে এবং সংশোধন করার ব্যবস্থা নেবেন।
চলচ্চিত্রের গানে রয়্যালিটির সুবিধা: অতীতে চলচ্চিত্রের গানের প্রণেতা হিসাবে কেনো সংগীত কর্ম সৃজনকারী রয়্যালিটি পেতেন না। তারা একটি চুক্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রযোজকের কাছ থেকে শুধু এককালীন অর্থ পেতেন। আর সিনেমার প্রযোজক গানের মালিক হিসাবে যেভাবে খুশি, যে প্ল্যাটফরমে ইচ্ছেমতো সে গান ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করতেন। সে উপার্জিত অর্থ থেকে কোনো রয়্যালিটি গানের গীতিকার বা সুরকার পরে পেতেন না। কিন্তু সংশোধিত কপিরাইট আইনে এই বিষয়ে বিশেষ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ আইনে সিনেমার প্রযোজকরা রয়্যালিটি না দিয়ে এভাবে কোনো চুক্তিই করতে পারবেন না।
এককালীন কোনো অর্থ দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে রয়্যালিটির অংশ সিনেমার গানের স্রষ্টা পাবেন। এক্ষেত্রে আইনের বিধান হবে, সিনেমা হলে বা সিনেপ্লেক্সে যখন চলচ্চিত্রটির অংশ হিসাবে গানটি প্রদর্শন করা হবে তখন গানটির সংগীত পরিচালক বা শিল্পী কোনো রয়্যালিটি পাবেন না। কিন্তু গানটি যখন আলাদাভাবে অন্য কোনো প্ল্যাটফরমে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে তখন সেখান থেকে অর্জিত আয়ের রয়্যালিটি গানের সংগীত পরিচালক, সুরকার, গায়ক, গীতিকার তারাও পাবেন। কপিরাইটের সংশোধিত এই আইনটি খুব শিগগিরই পাশের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হতে পারে বলে জানা গেছে। তথ্যসূত্র: যুগান্তর
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ