ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
রবিবার (২৩ জুলাই) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে এ দাবি জানান তিনি।
হিরো আলম বলেন, নির্বাচনটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই। সেদিন তারা জাল ভোট দিয়েছে। আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে, ১২ থেকে ১৩ বছরের ছেলে মেয়েরা ভোট দিচ্ছে। একটা মেয়ে ১০ থেকে ১৫টা ভোট দিয়েছে। তাদের জোড় করে ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেই ভিডিও ফুটেজ সহকারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জমা দিয়েছি। আমরা এ ফলাফল বাতিল চাই। পুনরায় নির্বাচনের জন্য এখানে এসেছি।
তিনি বলেন, আপনারা ভিডিও ফুটেজ দেখেন। সেদিন ভোট কত সুষ্ঠু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদকে, স্পিকারকে, বিনীত অনুরোধ করবো আরাফাত ভাই যাতে শপথ গ্রহণ না করতে পারেন। কারণ মানুষের সাক্ষী- প্রমাণের ওপর সবকিছু নির্ভর করে। ভিডিও ফুটেজ আপনারা সবাই দেখবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর চিঠি দিতে পারেন। এ জন্য এখানে আপিল করলাম। আপিলের শুনানি দেখার অপেক্ষায় আছি।
তিনি আরও বলেন, আমাকে নিরাপত্তা তারা দেয় নাই। আমি জীবন বাঁচানের জন্য যখন বিজিবির গাড়ির পাশে গেলাম একটা লোকও কিন্তু নামে নাই।
পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে হিরো আলম সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনার ফারুক স্যার যে কথাটা বলেছে তা খুবই দুঃখজনক, লজ্জাজনক। তার লজ্জা থাকলে এই কথা বলত না। কারণ একটাই, উনি বলেছে আমি নাকি একই কেন্দ্রে দুইবার গেছি। দৃষ্টি আকর্ষণ করতেছি, ভিডিও ফুটেজগুলো দেখবেন- আমি ওই কেন্দ্রে দুইবার গেছি কিনা। একবারই গিয়েছিলাম।
নেত্রকোনা-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কেন? ঢাকা শহরে থাকি বলে নির্বাচন করছি। অন্য জায়গায় কেন নির্বাচন করবো?
হিরো আলম বলেন, এ সরকারের অধীনে তিনটা নির্বাচন করলাম। ২০১৮ তে নির্বাচন করেছি তখন কিন্তু মার খেয়েছি। ২০২৩ সালে বগুড়ায় উপ-নির্বাচন করে সেখানেও মার খেলাম। এখান এসে নির্বাচন করলাম এখানেও মার খেলাম। তাহলে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে আশা করি বলেন? এ সরকারের অধীনে কতটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তা জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য অন্যায়ের প্রতিবাদের মশাল হিসেবে জনগণের পিছে কাজ করতে চাই। এর বাইরে কিছু না।
গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে ভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের পরিস্থিতি দেখছিলেন হিরো আলম। ভোটগ্রহণের শেষ দিকে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তিনি হামলার শিকার হন।
ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দিতে স্কুলের মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে সেলফি তোলেন হিরো আলম। তখন নৌকার ব্যাজধারী কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ধরেন এবং বলেন, ‘এটা টিকটক ভিডিও বানানোর জায়গা না’। এরপর হিরো আলমকে ধাওয়া শুরু করেন।
তখন কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে ধরে স্কুলের গেইটের বাইরে দিয়ে আসেন। এরপর হিরো আলমকে সড়কে ফেলে বেধড়ক পেটানো হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি আলোচনার জন্ম দেয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়েও হিরো আলমকে মারধরের প্রসঙ্গ উঠে আসে। ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস টুইট করে উদ্বেগ জানান। বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানায় ঢাকায় ১২টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠকেও এ ঘটনা আলোচনায় আসে।
ওই ঘটনায় বনানী থানায় মামলা হওয়ার পর পুলিশ নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে চারজন বর্তমানে পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।
পূর্বকোণ/পিআর