ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কিনা জানতে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শনিবার (১৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দেশে ও সারা বিশ্বের আগ্রহ কেন? কেন ইইউ’কে এখানে এসে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মতামত দিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনও দেশে তো তাদের যেতে হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ, গ্রহণযোগ্য না, আর এটার ওপর ভিত্তি করে সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশের ওপর নজর দিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের কনসার্ন প্রকাশ করেছেন, এ জন্য এসেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন এত বেশি প্রশ্নবিদ্ধ যে তারা জানতে চাচ্ছেন, নির্বাচন আগামীতে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কি হবে না। আমাদের পক্ষ হতে সবসময় বলে আসছি, শুধু আমরা না, বাংলাদেশের জনগণ যেটা বলছে, সারা বিশ্ববিবেক বলছে, এই রেজিমের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, সম্ভব না।
এই সরকার এখন থেকেই ভোট চুরি শুরু করেছে। তা ইইউকে অবগত করেছেন জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচনের ভোট চুরি এখনই চলছে। ডিসিদের পোস্টিং হচ্ছে, পুলিশের পোস্টিং হচ্ছে, টিএনওদের পোস্টিং হচ্ছে, বিএনপির নেতাদের গ্রেফতার চলছে। হাত কেটে ফেলা হচ্ছে। বিএনপির সমাবেশে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এটা তো অব্যাহতভাবে চলছে। তারপর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিচারকে ত্বরান্বিত করে সাজা দিয়ে তারা যেন নির্বাচন করতে না পারে এসব কাজগুলো এখনই চলছে। অর্থাৎ ভোট চুরি প্রত্যেক দিন চলছে বাংলাদেশে। শুধু ভোটের দিন নয়, এখন ভোট চুরি চলছে, এবং আগামীতেও নিজেদের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা জোর করে ক্ষমতায় যাবে, জনগণকে বাইরে রেখে। এই বিষয়গুলো পরিষ্কার। স্বাভাবিকভাবে এ বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। এগুলো আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি।
ইইউ আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ব্যাপারে কিছু বলেছে কিনা জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। সেটার উত্তর তারা দেবেন। আর পর্যবেক্ষকের প্রশ্ন তখনই আসে যখন একটা নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ, গণতান্ত্রিক বিশ্বে কেউ বিশ্বাস করে না বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোট দিয়ে জনগণ আজকের সরকার গঠন করেছে। এই প্রেক্ষাপটে যে সিদ্ধান্ত তারা দেবে সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু তাদের এখানে আসার উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার করছে, বাংলাদেশে কোনও নির্বাচন হয়নি।
আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে ইইউ কী ধরনের ভূমিকা রাখবে, এ বিষয়ে প্রতিনিধি দল কিছু বলেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়টা তো এই টিমের দায়িত্ব না। এই টিম বাংলাদেশের নির্বাচন প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে। এটার ওপর তারা রিপোর্ট করবে। এটা ইইউ সরকারের দায়িত্ব।
মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি কেন সবাই সফর করছেন। এবং তারা যখন বক্তব্য দিচ্ছে প্রথম কথাটাই বলছে, বাংলাদেশে তারা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। মানবাধিকার চায়, শ্রমিকের আইন সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা জানতে চায়। এখান থেকেই আপনারা ধরে নেন বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের কী ধারণা। এবং তারা কি চায় বাংলাদেশে। ডিপ্লোমেটিক ল্যাঙ্গুয়েজের থেকে বেশি কিছু বলার সুযোগ আছে?
সংলাপের বিষয় তিনি বলেন, যেখানে কোনও ডেমোক্র্যাটিক অর্ডার নাই, মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ, আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ, জীবনের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ, যেখানে ডেমোক্র্যাটিক অর্ডার অনুপস্থিত, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অনুপস্থিত, সেখানে সংলাপের জন্য তো ডেমোক্র্যাটিক অর্ডার লাগে। সেই এনভাইরনমেন্ট তৈরি হোক, তারপর না সংলাপের প্রশ্ন আসে।
পূর্বকোণ/এএইচ