২৩ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ৩০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৪ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬৩১ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬১ জন ও শিশু ৭২ জন। এছাড়া ১১৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০৬ জন।
এ সময় ১৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত, ২৬ জন আহত এবং ১৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১০৬ জন, বাসযাত্রী ১০ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ২৪ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ২৫ জন, থ্রি-হুইলারযাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি) ৭০ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র) ১১ জন এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ৯ জন নিহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলো ১৩১টি জাতীয় মহাসড়কে, ১১৫টি আঞ্চলিক সড়কে, ৩৭টি গ্রামীণ সড়কে এবং ২০টি শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪৯টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭২টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দিয়ে ও ২৫টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করার কারণে ঘটেছে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে আক্রান্ত হয়েছেন ২০.৪৮ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬.৫০ শতাংশ, মোটরসাইকেল বা অন্য যানবাহন দ্বারা ধাক্কা/চাপায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯.৭৫ শতাংশ, মোটরসাইকেল পথচারীকে ধাক্কা/চাপা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে ৮.৪৩ শতাংশ এবং সড়কের গর্ত ও স্পিড ব্রেকারের কারণে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৪.৮১ শতাংশ।
এদিকে, ঢাকা বিভাগে (সবচেয়ে বেশি) ৯৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৯ জন। সিলেট বিভাগে (সবচেয়ে কম) ১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং বরিশাল বিভাগে (সবচেয়ে কম) ১৫ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় (সবচেয়ে বেশি) ১৯টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দুর্ঘটনা ঘটেছে (সবচেয়ে কম) মানিকগঞ্জ, নোয়াখালী, বান্দরবান, পিরোজপুর ও জামালপুর জেলায়। এ ৫টি জেলায় স্বল্পমাত্রার কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
এবারের ঈদুল আজহা উদযাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২১.৬ জন নিহত হয়েছেন। গত বছরের ঈদুল আজহা উদযাপনকালে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিলেন ২৫.৯১ জন। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমেছে ১৬.৬৩ শতাংশ। এ প্রাণহানি কমার কারণ, পূর্বের বছরের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেশি ছিল। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবং বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান দুর্ঘটনা কমানোর জন্য আন্তরিকভাবে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। যদিও স্টেকহোল্ডারদের অসহযোগিতার কারণে এসব উদ্যোগের পুরোটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, বিধায় প্রত্যাশিত ফলাফল আসছে না বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
এবারের ঈদুল আজহায় রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি ৮৫ থেকে ৯০ লাখ মানুষ ঘরমুখী যাত্রা করেছেন এবং প্রায় ৩ কোটি মানুষ আন্তঃজেলায় যাতায়াত করেছেন। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ বঙ্গগামী ঈদযাত্রা স্বস্তির ছিল এবং পাটুরিয়া-দৌলদিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ ছিল না। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৩৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর বঙ্গগামী সড়কের টাঙ্গাইল, গোবিন্দগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় যানজট হয়েছে। অনেক পরিবহন মালিক যাত্রীদের নিকট হতে বেশি ভাড়া আদায় করেছেন। এ ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে সরকার তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ট্রেনে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। একইসঙ্গে টিকিট নিয়ে অসন্তোষ ছিল। নৌ-পথে অনেকটা স্বস্তি থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ ছিল। ঈদের পরে ছুটি কম থাকলেও মানুষ এক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে কর্মস্থলে ফিরেছেন। ফিরতি যাত্রায় শেষদিকে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে এবং কয়েকটি জায়গায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ফিরতি যাত্রায় তেমন কোনো তদারকি ছিল না। কোনো বছরেই থাকে না।
উল্লেখ্য, ঈদযাত্রা ও ঈদ উদযাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন। কিন্তু যেসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেনি অথবা শুধু আহত হয়েছেন- সেসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই গণমাধ্যমে আসেনি। ফলে দুর্ঘটনায় আহতের প্রকৃত চিত্র জানা যায়নি।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ