চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

পরীক্ষামূলক পর্যায়েই হোঁচট, পাইপলাইনে তেল খালাস বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ জুলাই, ২০২৩ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

সাগরে বড় জাহাজ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালাসের ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম)’ প্রক্রিয়া পরীক্ষামূলক পর্যায়েই হোঁচট খেয়েছে। পাইপলাইনে ত্রুটি পাওয়ার কারণে এসপিএম বয়াতে নোঙ্গর করা জাহাজটি থেকে আপাতত পাইপলাইনে আর তেল খালাস হচ্ছে না।

 

গত বুধবার দুপুর তিনটা নাগাদ পাইপলাইনে তেল খালাসের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ। ফলে সৌদি আরব থেকে আনা তেল খালাস হবে প্রচলিত লাইটারিং প্রক্রিয়ায়। সাগরে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত থাকায় উত্তাল ঢেউয়ে এসপিএম বয়াতে তেলবাহী জাহাজ ‘হরে’কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মহেশখালির কাছাকাছি। সেখানেই অবস্থান করে লাইটারিংয়ের মাধ্যমে তেল নিয়ে আসা হবে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে।

 

পাইপলানের ক্রটি প্রসঙ্গে ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, সৌদি থেকে আনা ক্রুড অয়েল এসপিএম পাইপলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে খালাসের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু গত বুধবার দুপুরে হোর্স পাইপে ত্রুটি পাওয়ায় আপাতত আর পাইপলাইনে তেল খালাস হচ্ছে না। পাইপলাইনে ত্রুটি পাওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ত্রুটি সারানোর পর আবার পাইপলানে তেল খালাসের কাজ শুরু করা হবে।

 

তিনি আরো বলেন, পাইপলাইনে তেল খালাসের কাজটি বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি কাজ। সবে মাত্র পাইপলাইনের কাজ শেষ করে আমরা পরীক্ষামূলক এটি চালু করছি। এই ট্রায়ালে কোন ত্রুটি পেলে সেটি সারানোর পরই আনুষ্ঠানিকভাবে পাইপলাইনে তেল খালাসের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। এই কাজে নিয়োজিত কন্ট্রাকটর কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে আশা রাখি।

 

সৌদি আরব থেকে প্রায় ৮২ হাজার টন অশোধিত তেল নিয়ে জাহাজটি গত ২৪ জুন দেশে পৌঁছে। এরপর সাগর উত্তাল থাকায় সাতদিন অপেক্ষার পর গত রবিবার (২ জুলাই) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরের তত্ত্বাবধানে তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজ ‘হরে’ ক্রুড অয়েল নিয়ে পাইপযুক্ত বয়ায় সফলভাবে ভিড়ে। চট্টগ্রাম বন্দরে টাগবোট কান্ডারি-৩, কান্ডারি-৪ ও কান্ডারি-১০ জাহাজ এবং পাইলট জাহাজ দিশারি-২ সহায়তা করে সফলভাবে মুরিং করেছিল। এরপর গত মঙ্গলবার (৪ জুলাই) তেল খালাস শুরু হয়। কিন্তু পরদিন বুধবার ক্রুটি পাওয়ায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

 

‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ নামে প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড।

 

উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় এখন বড় জাহাজগুলো থেকে তেল সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে ছোট লাইটারেজের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ খালাসে ১০-১১ দিন এবং ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলবাহী জাহাজ খালাসে ৪-৫ দিন সময় লাগে।

 

গতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় বড় জাহাজ থেকে সরাসরি তেল খালাসের জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নেওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপলাইনে করে জ্বালানি তেল পরিবহনে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে নগরীর পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারির মধ্যে সংযোগ তৈরি করা হয় হয়।

 

এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে। ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইন প্রথমে নিয়ে আসা হয় কালারমারছড়ায় সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন এন্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে।

 

সেখান থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। এসপিএম চালু হলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) বছরে সাশ্রয় হবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা।

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট