বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ নিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্দেশে বিবৃতি দিয়েছেন ২৫ বাংলাদেশি-মার্কিন নাগরিক। গত ১ জুলাই বিবৃতিটি প্রকাশ করেন বিশিষ্টজনেরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট বাইডেন, আমরা, নিম্নস্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-আমেরিকান নির্বাচিত কর্মকর্তা, মানবাধিকার, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলকে জোরালোভাবে সমর্থন করি। বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমরা আপনার প্রশাসনের উদ্বেগের প্রশংসা করলেও, মার্কিন নীতিকে অবশ্যই বাংলাদেশে ব্যাপক সন্ত্রাসবাদের ঘটনা বিবেচনা করতে হবে যা সরাসরি বিএনপি-জামাত জোট এবং জোটের পৃষ্ঠপোষকতায় অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠন দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। মুসলিম দেশ ও অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক মাত্রা বিবেচনা না করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বারবার ব্যর্থতার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া এবং লিবিয়া আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার উজ্জ্বল উদাহরণ। আমরা বাংলাদেশে তা চাই না।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অনুগ্রহ করে আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার অনুমতি দিন। বাংলাদেশে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে চারটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং ভাল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানই উদার গণতান্ত্রিক ফলাফলের নিশ্চয়তা দেয় না। বিশেষ করে, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের দুটি অবাধ নির্বাচনের মধ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো ইঙ্গিত করে যে ২০০৪ সালে একটি অবাধ (এবং তথাকথিত সুষ্ঠু) নির্বাচন প্রকৃতপক্ষে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থাকে পরিবর্তন করবে না যদি না অংশীজনদের নিরাপত্তা, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পাওয়া, এবং সংখ্যালঘু এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দেওয়া।
উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ সালের অক্টোবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ইসলামী জোট জয়লাভ করে। বিজয়ের পরপরই, জোট বাংলাদেশের ১১টি পশ্চিম জেলা জুড়ে হিন্দু এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব আক্রমণ চালায়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য হিন্দু ও বিরোধী কর্মীদের টার্গেট করা হয়েছিল। সহিংসতার ফলে ব্যাপক লুটপাট এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, হিন্দু নারীদের ধর্ষণ এবং হিন্দুদের উচ্ছেদ করা হয়। এটি ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে চলতে থাকে, কিছু ক্ষেত্রে জোট নেতাদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘন ঘন সহিংসতা।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করছি, আপনার প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ এবং কিছু আইন প্রণেতাদের বক্তব্য বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্যের মতো হচ্ছে এবং এই পদক্ষেপগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা এসব ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং বিনীতভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে প্রতিফলিত করে এমন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি, যা বাংলাদেশকে সহিংসতামুক্ত একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্র দুটি বিরোধী শক্তিতে ভরপুর, একটি বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ উদার আদর্শের সঙ্গে এবং অন্যটি রাজনৈতিক জঙ্গিবাদের সঙ্গে মিশ্রিত ধর্মীয় উগ্রবাদে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং অপরটির নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত অক্ষ। সাম্প্রতিক মার্কিন নীতি এবং বক্তৃতা শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদীদের অনুপ্রাণিত করছে এবং উদারপন্থী শক্তিকে বিভ্রান্ত করছে। বাংলাদেশের জন্য সহিংসতামুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আমরা আপনাকে বর্তমান কর্মপন্থা পরিবর্তন করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।’
যারা সাক্ষর করেছেন-
১. নির্বাচিত বাংলাদেশি-মার্কিন নাগরিক কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন নবী, এনজে; মেয়র মাহাবুবুল আলম তৈয়ুব, পিএ; অঙ্গরাজ্য প্রতিনিধি আবুল খান, এনএইচ; কাউন্সিলম্যান আবু আহমেদ মুসা, এমআই এবং কাউন্সিলম্যান নুরুল হাসান, পিএ।
২. সম্প্রীতি ফোরাম, অধ্যাপক এবিএম নাসির, এনসি।
৩. ইউএসএ বঙ্গবন্ধু পরিষদ, প্রকৌশলী রানা হাসান মাহমুদ, সিএ এবং প্রকৌশলী স্বীকৃতি বড়ুয়া, এনওয়াই।
৪. বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভেটেরান্স ১৯৭১, ইউএসএ ইনকর্পোরেটেড, গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ।
৫. ক্যালিফোর্নিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ, নজরুল আলম।
৬. ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ইউএসএ, ফাহিম রেজা নূর, এনওয়াই।
৭. মিশিগান বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ইঞ্জি. আহাদ আহমেদ।
৮. ইউএসএ কমিটি ফর ডেমোক্রেটিক অ্যান্ড সেক্যুলার বাংলাদেশ, জাকারিয়া চৌধুরী।
৯. জর্জিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ, মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়া।
১০. বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার খুরশীদ আনোয়ার বাবলু।
১১. গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি বঙ্গবন্ধু পরিষদ, দস্তগীর জাহাঙ্গীর।
১২. মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ড. আব্দুল বাতেন।
১৩. ম্যাসাচুসেটস বঙ্গবন্ধু পরিষদ, সফেদা বসু।
১৪. মোরশেদ আলম, গণতান্ত্রিক নেতা, এনওয়াই।
১৫. পেনসিলভানিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ, আবু তাহের বীর প্রতীক।
১৬. একাডেমিক গ্রুপ: প্রফেসর জিয়াউদ্দিন আহমেদ, পিএ; প্রফেসর মিজান আর মিয়া, আইএল;প্রফেসর জামিল তালুকদার, ডব্লিউআই, এবং প্রফেসর শাহাদাত হোসেন, এনওয়াই।
১৭. দক্ষিণ নিউ জার্সি বঙ্গবন্ধু পরিষদ, নূরন্নবী চৌধুরী।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ