চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘূর্ণিঝড়: আগে-পরে যা করবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ মে, ২০২৩ | ১:১৭ অপরাহ্ণ

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে রবিবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে। এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে বেশকিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিলে কমে আসতে পারে ক্ষয়-ক্ষতি।

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে করণীয়:
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ সতর্কবার্তায় নজর রাখুন। এটি আপনাকে ঘূর্ণিঝড়জনিত জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত রাখবে। গুজব এড়িয়ে চলুন এবং তা ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। এটি আতঙ্কজনক পরিস্থিতি এড়াতে সহায়তা করবে। সতর্কবার্তার বিষয়ে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা সজাগ থাকুন। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তার মানে হলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিপদের শঙ্কা আছে।

আপনার এলাকা ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার মধ্যে থাকলে সমুদ্র উপকূলের নিম্নাঞ্চল কিংবা উপকূলের কাছে অন্যান্য নিম্নাঞ্চল থেকে দূরে থাকুন। উঁচু স্থান বা সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার পথ প্লাবিত হওয়ার আগেই নিরাপদে পৌঁছান। আপনার বাড়ি যদি উঁচু স্থানে নিরাপদভাবে নির্মাণ করা হয়, তাহলে সেখানকার নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন। তবে নিরাপদে সরে যেতে বললে দেরি করবেন না।

হার্ডবোর্ড দিয়ে বাড়ির কাচের জানালা ঢেকে রাখুন এবং দরজার ক্ষতি এড়াতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। ঘরে অতিরিক্ত শুকনো খাবার রাখুন। যথাযথ ঢাকনাওয়ালা পাত্রে অতিরিক্ত পানযোগ্য পানি রাখুন। ঘর ছেড়ে দিতে হলে সম্ভাব্য বন্যার ক্ষতি এড়াতে মূল্যবান জিনিসপত্র ওপরের তলা কিংবা উঁচু স্থানে রাখুন। বিশেষ খাবার দরকার হয়, এমন শিশু ও বৃদ্ধদের সেটি দেয়ার ব্যবস্থা করুন।

দুর্যোগকালে করণীয়:
বিপদ সংকেত পাওয়া মাত্র বাড়ির নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের আগে নিকটবর্তী নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় আগুন নিভিয়ে যান। অতি প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যসামগ্রী- ডাল, চাল, দেয়াশলাই, শুকনো কাঠ, পানি, ফিটকিরি, চিনি, নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ, ব্যান্ডেজ, তুলা, ওরস্যালাইন পলিথিন ব্যাগে ভরে গর্তে রেখে ঢাকনা দিয়ে পুঁতে রাখুন।

আপনার গরু-ছাগল নিকটস্থ উঁচু বাঁধে অথবা উঁচু স্থানে রাখুন। কোনো অবস্থায়ই গোয়ালঘরে বেঁধে রাখবেন না। কোনো উঁচু জায়গা না থাকলে ছেড়ে দিন, বাঁচার চেষ্টা করতে দিন। শক্ত গাছের সঙ্গে কয়েক গোছা লম্বা মোটা শক্ত রশি বেঁধে রাখুন। রশি ধরে অথবা রশির সঙ্গে নিজেকে বেঁধে রাখুন, যাতে প্রবল ঝড়ে ও জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিতে না পারে।

বাড়ির আশপাশে গাছের ডালপালা আসন্ন ঝড়ের আগেই কেটে রাখুন, যাতে ঝড়ে গাছগুলো ভেঙে বা উপড়ে না যায়। দলিলপত্র ও টাকা-পয়সা পলিথিনে মুড়ে নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখুন অথবা সুনির্দিষ্ট স্থানে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখুন। টিউবওয়েলের মাথা খুলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করে মুখ পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে আটকে রাখুন।

দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয়:
রাস্তাঘাটের ওপর উপড়ে পড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলুন, যাতে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে এবং দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করুন এবং নিজের ভিটায় বা গ্রামে অন্যদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিন। অতি দ্রুত উদ্ধার দল নিয়ে খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করুন।

দ্বীপের বা চরের নিকটবর্তী কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য দলবদ্ধ হয়ে দড়ি ও নৌকার সাহায্যে লোক উদ্ধার কাজ শুরু করুন। কাদায় আটকে পড়া লোকের কাছে দড়ি বা বাঁশ পৌঁছে দিয়ে তাকে উদ্ধার কাজে সাহায্য করুন। ঝড় একটু কমলেই ঘর থেকে বের হবেন না। পরে আরও প্রবল বেগে অন্যদিক থেকে ঝড় আসার আশঙ্কা বেশি থাকে।

সুপেয় পানির জন্য পুকুরের বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করুন। বৃষ্টির পানি ধরে রাখুন। লবণাক্ত পানি খাবেন না। নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ লোকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ত্রাণ বণ্টন (আলাদা লাইনে) করুন। দ্রুত উৎপাদনশীল ধান ও শাক-সবজির জন্য জমি প্রস্তুত করুন, বীজ সংগ্রহ করুন এবং কৃষিকাজ শুরু করুন, যাতে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফসল ঘরে আসে।

পূর্বকোণ/এ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট