চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

৫৭৪ কোটি টাকায় আরেক কার্গো এলএনজি কিনবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৯:৫১ অপরাহ্ণ

স্পট মার্কেট বা আন্তর্জাতিক খোলা বাজার থেকে আরেক কার্গো এলএনজি কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ৩২ লাখ এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন বৃটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজি কিনতে খরচ হবে ৫৭৪ কোটি টাকা। এই কার্গো সরবরাহের কাজ পেয়েছে সুইস কোম্পানি ভিটল।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে জ্বালানি বিভাগের এই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত না থাকায় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

সূত্র জানিয়েছে, প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজির দাম পড়ছে ১৬.১০ ডলার। এর আগের দুই কার্গোর চেয়ে এই কার্গোর এলএনজির দাম কম।

এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা কমিটি স্পট মার্কেট থেকে ৬৯০ কোটি টাকায় ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করার অনুমোদন দেয়। প্রতি ইউনিট ১৬.৫০ ডলারে জাপানের জেরা কোম্পানি ওই কার্গো সরবরাহের কাজ পায়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি চলতি বছর প্রথমবরের মতো স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করার অনুমোদন দেয়। ওই কার্গোর প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ছিল ১৯.৭৪ ডলার। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস বন্ধ থাকার পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি ওই কার্গোর এলএনজি দেশে আসে। এরপরই গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়। ৬২ হাজার টন এলএনজির কার্গোটি সরবরাহ করে টোটাল এনার্জি।

বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। গতকাল সোমবার পেট্রোবাংলা ২৭৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে এলএনজি থেকে পাওয়া গেছে ৫৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এর আগে গত ১৭ মার্চ দেশে গ্যাসের সরবরাহ ছিল ২৬৬.৮৩ কোটি ঘনফুট, যার মধ্যে এলএনজি থেকে পাওয়া যায় ৪৫.৬৭ কোটি ঘনফুট।

এক সময় আমদনি করা এলএনজি থেকে দিনে ৮৫ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ হতো। করোনা পরবর্তী চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে গত বছর আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বাড়তে থাকে। স্পট মার্কেটে যে এলএনজি বাংলাদেশ ১০-১২ ডলারে (প্রতি এমএমবিটিইউ) কিনতো, তা বেড়ে ৫০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

দাম বৃদ্ধির কারণে লোকসান কমাতে সরকার গত জুলাই মাস থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেয় পেট্রোবাংলা। ফলে দৈনিক গ্যাসের সরবরাহ ৪০-৪৫ কোটি ঘনফুট কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে সব খাতে। সিএনজি ও বাসা-বাড়িতে সরবরাহ কমিয়েও সরকার পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি। বিদ্যুৎ ও শিল্পে গ্যাসের ঘাটতি চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।

সংকট মোকাবেলায় সরকার ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুতে লোডশেডিং শুরু করে। শিল্প মালিকরা গ্যাসের জন্য হাহাকার শুরু করে। তারা বাড়তি দাম দিয়ে হলেও গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা চায়। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে এবং চিঠি দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে গত ২৮ জানুয়ারি বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে রেকর্ড ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়ায় সরকার। গ্যাসের বর্ধিত মূল্য দিয়ে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

দেশে গ্যাসের ঘাটতি মেটতে ২০১৮ সাল থেকে সরকার এলএনজি আমদানি শুরু করে। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কাতারের রাস গ্যাস প্রথম এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে। রাস গ্যাসের সঙ্গে ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৫ বছর মেয়াদী চুক্তি সই করে পেট্রোবাংলা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭৩ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করে রাস গ্যাস।

২০১৮ সালের ৬ মে ওমানের ওকিউি ট্রেডিংয়ের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদী চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। এই চুক্তির আওতায় প্রথম কার্গো আসে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৬ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করে ওমানের কোম্পানিটি।

স্পট মার্কেট থেকে সরাসরি এলএনজি আমদানি শুরু হয় ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৬টি কোম্পানির সঙ্গে পেট্রোবাংলার চুক্তি রয়েছ। স্পট মার্কেট থেকে এখন পর্যন্ত ২৯ কার্গো এলএনজি কিনেছে বাংলাদেশ।

 

পূর্বকোণ/মামুন/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট