
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৯৬তম জন্মবার্ষিকী। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকের কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশের পরপরই তিনি সচেতন পাঠকমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীকালে প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থগুলোও আকৃষ্ট করে বোদ্ধা পাঠক মহলে। শামসুর রাহমানের ‘আসাদের শার্ট’ কবিতায় ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের চিত্র শব্দমালায় ভেসে উঠে। এ কবিতাটি শামসুর রাহমানকে খ্যাতির অন্যমাত্রায় পৌঁছে দেয়। পরবর্তীতে ‘আসাদের শার্ট’ কবিতাটি তাঁর বিখ্যাত কবিতার মধ্যে অন্যতম। এ কবিতা ঊনসত্তরের উত্তাল সময়কে ধারণ করে আছে। বাঙালি জাতির সংকটময় মুহূর্তে এ কবিতাটি বারবার উচ্চারিত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শামসুর রাহমান সপরিবারে পৈতৃক বাড়ি নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে চলে যান। এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বেদনামথিত হয়ে লেখেন ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’সহ বেশকিছু কবিতা। তাঁর ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি যেন মন্ত্রোচ্চারণের মতো অনিবার্য, আবহমান বাংলার সাধারণ জীবনের মতো স্বাচ্ছন্দ্য।
স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর-পরবর্তী পট পরিবর্তনে আশাহত কবি সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে কলম চালিয়েছেন নিরন্তর। গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাক্সক্ষায় তিনি ছিলেন সবগুলো আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্র ভাগে। শামসুর রাহমানের ৬৬টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়ও শিশুতোষ, অনুবাদ, ছোটগল্প, উপন্যাস, আত্মস্মৃতি, প্রবন্ধ-নিবন্ধের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
সাংবাদিক হিসেবে কবি শামসুর রাহমান ১৯৫৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ। ১৯৭৭ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর তিনি অধুনা নামের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শামসুর রাহমান আদমজি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, জীবনানন্দ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। রবীন্দ্রভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি দেয়। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। কবিকে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ঢাকার বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
পূর্বকোণ/ইবনুর