চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

বাবার বৃদ্ধাশ্রম যাত্রা

সিরাজুল মোস্তফা

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০৮ পূর্বাহ্ণ

এখন রাত দুটো বাজে। রাস্তাঘাট মল-মার্কেট সবই শূন্য। কেবল মেইন রাস্তার উপর কটা কুকুর কিছুক্ষণ পরপর একই সুরে ঘেউঘেউ করে চেঁচাচ্ছে। এছাড়া আর কারুর সাড়া শব্দ শুনছি না। নৈশবদ্য রাতে বাইরে আজ পূর্ণিমার ধবল চাঁদ উঠেছে। জোছনার আলো আমার বারান্দায় কর দিয়ে যাচ্ছে। চোখের কোণে চিকচিক করে পানি ঝরছে। বিছানায় সে কখন থেকে এপাশ-ওপাশ করছি। কিছুতেই ঘুম আসে না, ঘুমও আজ স্বার্থপর। মনে পড়ছে মাকে। মার স্মৃতিকে। বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। গাওদিয়ায় আমাদের চৌচালা বাড়ি ছিল। বাবা থাকতেন বিদেশে, সউদি আরবে। পরপর তিনটি বোনের পর একমাত্র ছেলে আমি। সে সুবাধে সংসারে আদর যতেœর নিত্য বাড়াবাড়ি ছিল। এ নিয়ে কারুর আপত্তি না থাকলেও আমার পিঠের বোনটি এতে বাগড়া বসাতে চাইত। তার দাবি সবসময় আমি কেন সবকিছুতে বেশি বেশি নেব, এটি তার অসহ্য ছিল। একটু বেশ-কম হলেই তার উপর সজোরে চড়-থাপ্পর কিলঘুষি চালালেও দেখা যেত মা এসে তাকেই আবার বকতেন। বাঙালি মা’দের বাইরে নয় আমার মাও। এ নিয়ে সে হইচই বাধিয়ে ছাড়তো। বড় আপুরা তাকে থামানোর যথাসাধ্যি চেষ্টা করতেন। এক মাত্র ছেলে বলে সবসময় মা-বাবার চোখের মণিকোটায় ছিলাম। মোবাইল ফোনের যুগ। প্রতিদিন রাতে বাবা সউদি থেকে ফোন করে কারুর সাথে কথা বলেন বা না বলেন, হাসনাইনের সাথে বলতেনই। যেদিন আজকের মতন এমন আলোভরা জোছনা রাত হতো। আমাদের উঠোনের এককোণে বেলম্বু গাছটির থোকাই থোকাই জোছনা রাশি রাশি যেন ঝুলে থাকতো। মা উঠোনে নিজের হাতের বুনা শীতল পাটি বিছিয়ে দিয়ে আমাদের চারজনকে নিয়ে বসতেন। কবিতার পর কবিতা পড়তেন, ছড়ার পর ছড়া আওাড়তেন। তাতে লোক গীতির সংখ্যাই ছিল বেশি। সেসব লোক গীতি পরে বা আগে বই-পুস্তক ঘেঁটেও খুব বেশি পাইনি।
সম্ভবত এসব চট্টগ্রাম অঞ্চলের লোকগীতি। তারপর মা রূপকথার গল্প বলতেন। রাজা-বাদশা, রাজকন্যা-রাজকুমার, চাঁদ আর তারাদের গল্প বলতেন। চাঁদের উপর একটা এমন চৌচালা বাড়ি আছে। সেখানে এক বুড়ি আছে, সে নিঃসন্তান। বুড়ি সারাক্ষণ দাওয়ায় বসে থাকে। তার ঘরের চালের পাশে নাকি একটা ভীষণ মিষ্টি বড়ই গাছ আছে। সে গাছের পাতায় আমাদের মানে পৃথিবীর তাবৎ মানুষের নাম সাথে জন্ম মৃত্যু লেখা আছে। যখনই কারুর মৃত্যুর সময় হবে খোদাতায়ালার ইচ্ছেয় সে বুড়িটি তার হাতে থাকা আঁকুশি দিয়ে সে পাতাটি গাছ থেকে ফেলে দেন। তারপর নিমিষে যমদূত এসে তা দেখে আমাদের কাছে আসে। কতকত বাঁধন, কতকত স্বপ্ন সব সে ছিন্ন করে এক মুহূর্তও যেন তার ভাববার প্রযোজন পড়ে না। ছোঁ করে রূহ নিয়ে পালাই। আমরা মরে যাই। সবাই কাঁদে। তারপর দেহটা কবরে পুঁতে রাখে সাড়ে তিন হাত গর্তে। আমি বলতাম আচ্ছা মা, মা! আমরা মরে যাওয়ার পর কয় যাব? মুনিয়া আপা বলতো, মরার পর কি মা আমাদের আর দেখা হবে না?

মা বলতেন হবে, আকাশে! ঐ যে চাঁদের পাশে অনেকগুলো তারা দেখছো। মিটমিট করে জ্বলছে। দেখতে পাচ্ছ? আমরাও তেমন তারা হয়ে যাব। পাশাপাশি তারা হয়ে জ্বলব। তাই কি! মা তুমিও কি তারা হবে, তারাগুলোতে অনেক দূরে ওদের ছোঁয়া যায় না। কেবল দূর থেকে দেখা যায়। হেরে বাপ। আমার চোখদুটো ছলছল করতো। বলতাম, না মা! কক্ষনো না। তুমি সবসময় আমার পাশে থাকবে। এতদূরে গেলে আমাকে এভাবে করে গল্প শোনাবে কে! আমি বা কার কোলে মাথা রেখে গল্প শোনব? তোমার তারা হতে হবেনা তুমি আমার মা-ই থাকেবে। মা শাড়ির আঁচলে চোখ দুটো মুছতেন। পরপর তিনটে মেয়ে হওয়ার পর আমার জন্ম। একটা ছেলের জন্য মার সে কি আকুলিবিকুলি! শ্বশুর বাড়ির লোকজন মাকে কত হেনস্তা করতো,
-বছর বছর মেয়ে জন্মমাও একটা ছেলে জন্মাতে পারনা! আল্লাহ আমার ভাইটার কি হবে!

অবশ্য আমার বাবা সর্বদা মাকে আশ্বস্ত করতেন, ছেলে-মেয়ে আল্লাহর হাতে। আমরাতো চেষ্টা করছি তাইনা। তোমারিবা দোস কি! শুনেছি জনৈক ফকিরের কাছ থেকে রেশম পরা আর চিনি পরা এনে মা আমাকে জন্ম দেন। যদিও এখনকার অনেকেই পীর ফকিরিতে বিশ্বাসী না। তাও সত্যি হোক বা মিরাকেল হোক আমি পরের বছর জন্মেছিলাম। সদ্য সি.এ পড়ে দেশের একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে চাকুরিতে যোগ দান করি। ঢাকা শহরের উপর বিশাল নিজস্ব ফø্যাট. মার্সিডাইজ গাড়ি। সংসারের প্রতিটি কোণায় কোণায় এখন সুখ। গ্রামের এককালের পুরাতন চৌচালা বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছি। বিক্রির সময় বাবার কি কান্না। ওখানে আমার দাদুর কবর। এ নিয়ে স্মৃতিকাতর ছিলেন। কথা নিলেন মরার পর তাকেও সেখানে সমাহিত করা হবে। ঢাকায় বাড়ি নিব বলে আর গাওদিয়ার পুরাতন বাড়িটি রাখলাম না। তবে যে সুখের আশায় ঘর বাঁধা সে ঢাকার সুখ আর বেশিদিন টিকেনি। একদিন রাতের খাবারের পর মার হঠাৎ জানি কেমন ধড়পড় করছিল বুকটার ভেতর। বলেই বিছানায় কাৎ হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠোতে চেয়েছিলাম।
মা বললেন,

– হাসনাইন ব্যস্ত হইসনা বাপ! আমি আর ভালো হবোনারে। ঐ যে চাঁদের বুড়ি আমার নামের পাতাটি আঁকুশি দিয়ে ঝেড়ে ফেলেছে। এদিকে আয় বাবা, মাকে তুই অনেক ভালোবাসিস তাইনা? মরার সময় মা তোর কাছে একটা জিনিস আবদার করলে রাখবি? তোর কাছে মার একটা আবদার। রাখবিতো! শোন বাবা তোর বাপটা, জীবনে অনেক কষ্ট করেছেরে। জীবনের অনেক সময় বিদেশে কাটিয়ে দিয়েছে। শুধু তোদের জন্য। এই যে তোর সি.এ পড়া তোর আপুদের বিয়ে দেওয়া এসব করতে করতে তার জবিন কেটেছে। সুখের স্পর্শ সে কখনো পায়নি। তুই সারাটা জীবন তাকে দেখে রাখিস বাপ। মাযের কথা তোর মনে পড়লে তার কোলে মাথা রাখিস তার কাছেই তুই আমাকে পাবি। আজ থেকে তোর বাপ-মা দুটোই সে। আমাদের একটা মাত্র ছেলে তুই। মনে রাখিস আজকের পর তুই ছাড়া তাকে দেখার কেউ নেইরে বাপ।
পাশে বসা বাবার চোখ দুটো তখন ভিজে একাকার। মাকে ঝড়িয়ে ধরে আমিও হাউমাউ করে কাঁদছিলাম।
কান্নাভরা কণ্ঠে বাবা বলেছিলেন

-তৃপ্তির মা স্বামী হিসেবে যদি তোমাকে কখনো কষ্ট দিয়ে থাকি তুমি ক্ষমা করে দিও আমাকে।
মার চোখ দুটো ভিজে আসে। শরীরটা ধীরে ধীরে শীতল হয়ে আসে। সবার সামনেই ফুড়ুৎ করে মা উড়াল দিয়ে চলে যায় চাঁদ আর তারাদের দেশে। বিশ্বাসী হচ্ছিল না আজ থেকে আমারও মা নেই! আমার মাও তারা হয়ে গেছে। আপুদের জানানো হল, কাশেম চাচাকে খবর দেওয়া হলো। কবর খোড়াখুড়ি চলল। রাতেই চট্টগ্রাম নেওয়া হলো মা’র লাশ পরদিন আমাদের পারিবারিক গোরস্থানে শায়িত করা হয় মার দেহটাকে। মার কবরে লাশ রেখে উঠতে পারছিলাম না। কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে লুটিয়ে পড়ি। লোকজন ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে আসে। মা চলে গেছে ঠিকই। মনে হচ্ছিল তাও যেন মার মনটা বাবার ভেতর পরে ছিল। মা বাবাকে ভীষণ রকম ভালোবাসতো। মানুষ মরে ভালোবাসা মরে না। ভালবাসা চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। অমর অক্ষয়। মাটি-আগুন, কিংবা জল কিছুই তাকে ছুঁতে পারে না।
বাবা আর আমি একাকী খাওয়া-দাওয়ায় প্রচুর অসুবিধে। বুয়াটাও বিদায় করতে হলো। একা দুটো পুরুষের ভেতর বুয়া রাখা গেল না। বাবা বললেন বাবু, এবার তুই একটা বিয়ে করে পেল। তাহলে বৌ এসে আমাদের বাপ-বেটাকে চারটে মাছ-ভাত রান্না করে খাওয়াবে। বড় আপুদেরও তাই মত। অনেক খুঁজে মিলিকে পেলাম। প্রথম দেখাতেই বাবার পছন্দ হলো তাকে। মা মরে যাওয়ার সময় কথা দিয়েছিলেন বাবার অমত কখনো না হতে, তাই আমরাও বাবার কথায় দ্বিমত করিনি। বিয়েটা মহা ধুমধামে হলো। এখন আর খাবার দাবারের সমস্যা নেই। বিয়ের পর বেশ ক‘বছর আমারও সন্তানাদি হচ্ছিল না। আমরা সবাই খুব টেনশনে। বউয়ের ভাই সাদমান অস্ট্রেলিয়া থাকে। বললো নর্থ সিডনিতে ওর পরিচিত একটা ডাক্তার আছে ইমিডিয়েট যেন মিলিকে পাঠায়। বাবাকে বলতেই বাবা এতদূর পাঠাতে আপত্তি জানালেন। মুখের উপর সরাসরি না বলে দিলেন। বললেন তারচে বাবা, যে ফকিরের দোওয়ায় তোকে পেয়েছিলাম সে ফকিরতো নেই, চল একবার তার ছেলের কাছে আমি আর তুই যাই। দেখি কি হয়। আমার অবশ্য তেমন আপত্তি ছিল না, যদিও এসবের প্রতি আমি অবিশ্বাসী। বৌকে বলে দেখলাম। বৌতো শুনেই আগুন। তোমার বাপের এসব গাঁও-গেরামের স্বভাব রাখো। অসহ্য একটা মানুষ। বৌয়ের সাথে না পেরে উঠে শেষমেষ সিডনি পাঠিয়ে দিলাম। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে সবই ঠিক বললো, নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে। তাহলেই হবে। তাই সিদ্ধান্ত হলো সে ওখানেই থেকে যাবে। তার ভাই নাকি আমার জন্যও একটা ভালো চাকরি খুঁজে পেয়েছে। তাই আমিও চলে যেতে তাড়াতাড়ি। তাহলে সবই সুবিধে হবে। এদিকে বাবাকে রেখে যাই কিভাবে! সাদমান জানালো উত্তরায় একটা বৃদ্ধাশ্রমের সাথে তার পরিচয় আছে, বললে ওরা খুব যত্ন করে তাকে রাখবে। বৃদ্ধাশ্রমের নাম শুনতেই আমার ভেতরটায় কম্পন শুরু হলো। শেষমেষ আমি নিজের বাপকে এমন জায়গায় রাখবো? না না ! এটা হতে পারেনা। মরা মার কথাগুলো আমার মনের ভেতর কথা বলতে লাগলো। কিন্তু বাসায় বাবাকে একা রেখে যাবোই বা কি করে! আপুরাও নিজনিজ শ্বশুর বাড়িতে। সাহস সঞ্চয় করে একদিন সন্ধ্যায় বাবাকে কথাগুলো বললাম। বাবা বললেন ঠিক আছে, তবে আমাকে বৃদ্ধাশ্রমেই রেখে যা বাপ! এত করে বললাম তাও তুই বৌটাকে বিদেশে পাঠাই দিলি। বললাম না বাবা তুমি আপুদের বাড়িতে থাকো তাহলে তো কোন সমস্যা হবেনা। আমি তোমার জন্য সব খরচাপাতি দিব।

-না বাপ! বৃদ্ধ বয়সে মেয়ের বাড়ি গিয়ে মরে তোর আমার কারুর মান সম্মান খোওয়াতে চাইনা। ঠিক আছে বৃদ্ধাশ্রমেই রেখে যা!
মিলি একের পর এক ফোন দিয়ে বিরক্ত করছিল। উপায়ন্তর না পেয়ে বাবাকে একদিন সেই বৃদ্ধাশ্রমেই রেখে আমি সিডনি চলে যায়। যাবার সময় আমার পষ্ট মনে পড়ছে বৃদ্ধাশ্রমের সেই আমলকি গাছটির তলায় দাঁড়িযে শেষ বিদায় জানাচ্ছিল বাবা। এমন করে জড়িয়ে দলে কাঁদলো পৃথিবীর সন্তানটিরও হৃদয় ভেঙে চুরমার হবার মতন। আমি শক্ত হয়ে গেলাম। যাতে বাবা না কাঁদে তাই। যাবার কিছুদিন পর মিলিও প্রেগন্যান্ট হয়। কি খুশি আমাদের!! প্রথম বাবা হওয়ার আনন্দ দুজনের চোখেমুখে ফুটে উঠছিল। সন্তান জন্মের মাসখানেক পর মিলি মারা যায়। এর মাঝে আমি যাওয়ার সপ্তাখানেক পরে দেশে বাবাও মরে যায়। চারদিকে দুঃখরা সব ভিড় জমিয়েছিল। আমি আবার সন্তানকে নিয়ে দেশে ফিরে আসি চুপিচুপি। কাউকে না জানিয়ে বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছি বলে ক্ষোভে অভিমানে সবার সাথে আমার দূরত্ব বাড়ে। সবার অগোচরে অনেক কষ্টেসৃষ্টে আইনানকে মানুষ করি। একাএকা। মিলি তার ছেলের নাম রাখতে বলেছিল আইনান বা দুচোখ। মানে সে আমাদের দুচোখের মণি। এই এক সন্তানের দিকে তাকিয়ে আমিও আর বিয়েথা করিনি। তার কষ্ট হবে বলে, যতেœর ব্যাঘাত ঘটবে বলে। সে এখন বড় হয়েছে। কিছুদির পুর্বে বিয়েও করেছে। বাবাও হয়েছে বছর খানেক হলো। কাল দুপুরের ফ্লাইটে আমেরিকা চলে যাবে স-স্ত্রীক। একা আমি কার সাথে থাকবো। বাবাকে তো বলেছিলাম আপুদের সাথে থাকতে। আইনানের তো আর কোন সহোদর ভাই-বোনও নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমাকেও সেই একই বৃদ্ধাশ্রমেই যেতে হবে কাল সকালে। জীবন! ব্যবধানটাতো মাত্রই কুড়ি-পঁচিশ বছরের। ছেলেটা বিদেশে থাকতে থাকতে বাবার মতন আমিও হয়তো একদিন চলে যাবো না ফেরার দেশে। এ আকাশ এ জোছনা এ রঙের মেলা, সব ছেড়ে দিয়ে বহুদূর বহুদূরে। হয়তোবা আমিও মার মতন আকাশের উজ্জ্বল আরেকটি শুভ্র তারা হয়ে মা’র পাশে মিটমিট করে জ্বলব। ভাগ্যিস আজ বাবা বেঁচে নেই, নয়তো কাল একই বৃদ্ধাশ্রমে, একই রুর্মে, তার সাথে দেখা হলে বাবা যদি বলতো,
-খোকা এলি?
কি করে মুখ দেখাতাম আমি তাকে!

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট