আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলা বাজারের ফুটপাত থেকে কেনা ‘রৌদ্র করোটিতে’ পড়ে শামসুর রাহমানের ভক্ত হয়ে যাই। তারপর কবিতা উৎসবকে কেন্দ্র করে কাছাকাছি আসি। তখন আমার বয়সি কম তরুণের সঙ্গে ওনার সখ্য ছিল। কখনো অনেকটা দেহরক্ষির মতো সঙ্গ দিয়ছি; বিশেষ করে মৌলবাদীরা যখন মুরতাদ ঘোষণা করে।
প্রদীপ মিত্রের ‘চাষী’ কবিতাপত্রে ওনার উপর ছোট্ট একটা গদ্য লিখেছিলাম। পড়ে খুশি হয়েছিলেন। শ্যামলীর বাসায় গেলে ইশারা করে দোতলায় ডেকে নিতেন। দোতলার জানালার পাশে একটা আমগাছ ছিল। ড্রয়িংরুমের দেয়াল জুড়ে ছিল বইয়ের আলমারি। দোতলার ঘরে বিছানার পাশে দেখেছি শুধু একটা চেয়ার টেবিল। বাসায় গোল গলা গেঞ্জি আর সাদা লুঙ্গি পরতেন। খুব মিষ্টি দেখতে ছিলেন। আচরণও ছিল নম্র।
কোন এক বৃহস্পতিবারের দুপুরে শ্যামলীর বাসায় যাই ওনার কিছু প্রুফকপি দিতে। ঐদিন সংবাদে ওনার কবিতার সঙ্গে আমার একটা গল্প ছাপা হয়। ড্রয়িংরুমে চা খেতে দিয়ে জানতে চান, লেখাটা কী আপনার?
-জ্বি, রাহমান ভাই।
-আপনি গদ্য লিখবেন। আমাদের বেশি বেশি গদ্য দরকার।
রাহমান ভাই সবাইকে ‘আপনি’ সম্বোধন করতেন। একবার প্রেস ক্লাবের একটা অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র নিয়ে যাই। খামে লেখা পরিচিতি দেখে বলেন, আমিতো এখন আর বাংলা একাডেমির সভাপতি নেই।
-ছেড়ে দিলেন কেন?
-এতো মিটিং ভালোলাগে না।
শেষের দিকে চোখের অসুখটা বেড়ে গিয়েছিল। ভালো দেখতে পেতেন না। একদিন ওনার চোখে ড্রপ দিয়ে দিয়েছিলাম। উনি জানতে চেয়েছিলেন, লেখালেখি চলে?
-কিছু কিছু।
-আপনি আসবেন।
কে জানতো আর দেখা হবে না!
জানাজার সময় তিলঠাঁই ছিল না। আমি আর অসীম মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অসীম বললো, প্রিয় মানুষ এভাবেই চলে যায়।
পূর্বকোণ/এসি