
ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপকে শুধু ‘মাদকবিরোধী অভিযান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলে বাস্তবতা আড়াল হয়। নিষেধাজ্ঞা, তেলবাহী জাহাজ আটক, আকাশসীমা বন্ধের হুমকি এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে নৌবহর মোতায়েন-এসব মিলিয়ে এটি এক ধরনের নীরব যুদ্ধ, যেখানে অস্ত্রের চেয়ে চাপই প্রধান হাতিয়ার।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশ্য যুক্তি হলো ‘নার্কো-টেররিজম’ দমন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়- লাতিন আমেরিকায় বহু দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন ভেনেজুয়েলাই লক্ষ্য? উত্তর লুকিয়ে আছে ভূ-রাজনীতিতে। ভেনেজুয়েলা বিশ্বের বৃহত্তম প্রমাণিত তেল মজুদের মালিক, অথচ ওয়াশিংটনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। উপরন্তু, কারাকাসের রাশিয়া-চীনঘেঁষা নীতি মার্কিন প্রভাববলয়ের জন্য অস্বস্তিকর।
ট্রাম্প যুগে কৌশল বদলেছে। কেবল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা নয়- নৌ অবরোধসদৃশ তৎপরতা, গোয়েন্দা অভিযান ও সামরিক উপস্থিতির মাধ্যমে রাষ্ট্রটিকে ধীরে ধীরে শ্বাসরুদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। এটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ নয়, আবার শান্তিপূর্ণ কূটনীতিও নয়- বরং eis low-intensity coercion (হালকা চাপ প্রয়োগ করে বা সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করে কাউকে কিছু করতে বাধ্য করা)।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ট্রাম্পের ঘরোয়া রাজনীতি। ভেনেজুয়েলাবিরোধী কঠোর অবস্থান ফ্লোরিডার লাতিন ভোটব্যাংকে জনপ্রিয়, ‘শক্তিশালী আমেরিকা’ বয়ানকে জোরদার করে এবং অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা থেকে দৃষ্টি সরাতে সহায়ক।
আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা বা বাণিজ্যিক জাহাজ আটক গুরুতর প্রশ্ন তোলে। আইন নয়, শক্তিই এখানে নীতিতে রূপ নিয়েছে- এমন অভিযোগ অমূলক নয়। ভেনেজুয়েলার ঘটনা মনে করিয়ে দেয়, শক্তির রাজনীতি স্বল্পমেয়াদে ফল দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা প্রতিরোধই জন্ম দেয়। আজ ভেনেজুয়েলা- আগামীকাল অন্য কেউ। ইতিহাস সেই সতর্কবার্তাই বারবার দেয়।