
ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে একটি জ্বালানি তেলের ট্যাংকার জব্দ করার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বিকেলে এক আয়োজনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প এ কথা জানান।
এ সময় ট্রাম্প বলেন, ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটা ট্যাংকার জব্দ করা হয়েছে। বেশ বড় একটা ট্যাংকার…আসলে জব্দ করা ট্যাংকারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এটা। এ নিয়ে পরে আরও বিস্তারিত জানানো হবে।
ট্যাংকার জব্দের ভিডিও প্রকাশ করতে গিয়ে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নৌযানটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, অপরিশোধিত তেলের এই ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলা ও ইরানে নিষেধাজ্ঞা থাকা তেল পরিবহনে ব্যবহৃত হতো।
কারাকাস যুক্তরাষ্ট্রের এ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ আখ্যা দিয়েছে। এর আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাদুরো জোর গলায় ঘোষণা করেন, ভেনেজুয়েলা কখনোই ‘তেল উপনিবেশ’ হবে না।
ভেনেজুয়েলা থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক ঢুকছে বলে ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করছে; সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চেষ্টাও জোরদার করেছে।
বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তেলের মজুদ থাকা ভেনেজুয়েলা পাল্টা অভিযোগে বলেছে, মাদক নয়, ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হচ্ছে তাদের তেল সম্পদ চুরি করা।
ট্যাংকার জব্দের খবরে স্বল্পমেয়াদী সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় বুধবার ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম খানিকটা বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ ওই জলসীমায় জাহাজ চলাচলে হুমকি বাড়াতে ও ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি বিঘ্নিত করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা সতর্কও করেছেন।
মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় ও মার্কিন কোস্ট গার্ড এই জব্দ কার্যক্রম সমন্বয়ে ছিল বলে জানিয়েছেন বন্ডি।
তার দেওয়া ভিডিওতে একটি সামরিক হেলিকপ্টারকে একটি বড় জাহাজের উপর ভাসতে, সৈন্যদের দড়ি ব্যবহার করে জাহাজের ডেকে নামতে ও উর্দিধারী লোকজনকে বন্দুক নিয়ে জাহাজের মধ্যে চলাচল করতে দেখা গেছে।
ঊর্ধ্বতন এক সামরিক কর্মকর্তা সিবিএসকে জানিয়েছেন, ট্যাংকার জব্দ অভিযানে ব্যবহৃত হেলিকপ্টারগুলো পাঠানো হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমাণবাহী রণতরী ইউএসএস গেরাল্ড ফোর্ড থেকে। গত মাসেই এই রণতরীটি ক্যারিবীয় অঞ্চলে পাঠানো হয়।
অভিযানে দুটি হেলিকপ্টার, কোস্ট গার্ডের ১০ সদস্য, ১০ মেরিন সেনার পাশাপাশি বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই অভিযানের বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং ট্রাম্প প্রশাসন সামনে এ ধরনের আরও পদক্ষেপের কথা ভাবছে, সিবিএসকে বলেছে একটি সূত্র।
জব্দ ট্যাংকারের তেল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, মনে হচ্ছে, আমরাই রেখে দেবো।
ভেনেজুয়েলার উপকূলে জব্দ নৌযানটির নাম ‘স্কিপার’ বলে জানিয়েছে সমুদ্রে ঝুঁকি ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ভ্যানগার্ড টেক। ট্যাংকারটি দীর্ঘ সময় ধরে তার অবস্থান সম্পর্কিত ভুল তথ্য দিয়ে আসছিল বলেও তাদের ধারণা।
তেল চোরাচালানের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর কুদস ফোর্সকে আর্থিকভাবে সহায়তার দায়ে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে এই ‘স্কিপারের’ ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
দুইদিন আগে নিজের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য দেওয়ার সময় নৌযানটি নিজেদেরকে গায়ানার পতাকাবাহী হিসেবে দেখিয়েছিল। তবে বুধবার সন্ধ্যায় গায়ানার সামুদ্রিক প্রশাসন বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, নৌযানটি তাদের ভূখণ্ডে নিবন্ধিত নয়।
ট্যাংকার জব্দের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দেওয়া বিবৃতিতে ভেনেজুয়েলা একে ‘গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ’ আখ্যা দিয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডিওসদাদো কাবেলো যুক্তরাষ্ট্রকে ‘খুনী, চোর, জলদস্যু’ তকমা দিয়েছেন।
তিনি এ প্রসঙ্গে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ানের’ কথাও টানেন। বলেন, ওই চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র জ্যাক স্প্যারো ‘নায়ক’ হলেও, ‘এরা (যুক্তরাষ্ট্র) সমুদ্রের বড় অপরাধী, লুটেরা’।
বিশ্বজুড়ে এভাবেই যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু করে বলেছেন তিনি।
এর আগে বুধবারই এক সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় মাদুরো ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধের বিরোধিতা করতে মার্কিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া বিখ্যাত গান ‘ডোন্ট ওরি, বি হ্যাপি’-র।
আমেরিকান নাগরিক, যারা যুদ্ধের বিরোধী, তাদেরকে একটি খুবই বিখ্যাত গানে জবাব দিই- ডোন্ট ওরি, বি হ্যাপি,” বলেন মাদুরো। এরপর গানটির কিছু অংশ গেয়েও শোনান।
পূর্বকোণ/পিআর