
নিউইয়র্কের কুইন্সে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয়কে অনেকেই দেখেছেন কেবল এক শহুরে ঘটনাপ্রবাহ হিসেবে, প্রগতিশীল নিউইয়র্কের স্বাভাবিক প্রতিফলন মাত্র। কিন্তু বাস্তবতা আরও গভীর। মামদানির জয় আসলে মার্কিন রাজনীতিতে এক নতুন স্রোতের ইঙ্গিত, এক শ্রমজাগরণের সূচনা, যা কুইন্স থেকে কানসাস পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
বহু দশক ধরে আমেরিকার রাজনীতি বন্দী ছিল এক অন্তহীন দ্বন্দ্বে। একপক্ষের স্লোগান ছিল ‘স্বাধীনতা ও বিশ্বাস’; অপরপক্ষের প্রতিধ্বনি ‘বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি’। অথচ উভয়েই ভুলে গিয়েছিল সেই শ্রমিককে, যিনি ওহাইওর কারখানায় চাকরি হারিয়েছেন; কিংবা টেক্সাসের ট্রাকচালককে, যিনি মজুরির অর্ধেক দিয়ে কেবল ঘরভাড়া মেটান। মামদানি তাদেরই ভাষায় কথা বলেছেন; ভাড়াটিয়ার, কর্মীর, নাগরিকের ভাষায়।
তার প্রচারণা ছিল সম্পূর্ণ তৃণমূলনির্ভর। কোন করপোরেট অর্থ নয়, কোন লবিস্টের প্রভাব নয়; তাই তার বার্তাও ছিল বাস্তব। কোন দান নয়, তার বার্তা ছিল বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবহন নাগরিক অধিকার সম্পর্কিত। তার বক্তৃতা যখন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে তখন তা শুধু কুইন্স নয়, পৌঁছে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির কেন্দ্রে শ্রমজীবী আমেরিকার অন্তরে।
আমেরিকার তথাকথিত ‘লাল রাজ্যগুলো’ আসলে একরঙা নয়। সেখানেও দুঃখ আছে, বঞ্চনা আছে, কর্মসংস্থানের সংকট আছে। যখন কোন নেতা বলেন, ‘মানুষের মর্যাদা মুনাফার চেয়ে বড়’, তখন সেই বার্তা আর দলীয় সীমারেখায় আটকে থাকে না। মামদানির সাফল্য দেখিয়েছে, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের ভাষা সর্বজনীন; যা পার্টি বা প্রদেশের নয়, মানুষের।
মামদানির বিজয় সমাজতন্ত্রের উত্থান নয়, বরং মানবিক অর্থনীতির পুনর্জন্ম। এটি এক নীরব বিপ্লব, যেখানে শ্রেণি ও মর্যাদা রাজনীতির নতুন রূপরেখা লিখছে। যদি ডেমোক্র্যাট দল এই মুহূর্তটি বুঝে নিতে পারে, তবে তারা আবারও ফিরে পেতে পারে সেই প্রাচীন পরিচয়- শ্রমিক শ্রেণির দল হিসেবে। আর রিপাবলিকানরা যদি শুধুই সংস্কৃতি ও ধর্মীয় স্লোগানে আবদ্ধ থাকে, তবে তাদের সবচেয়ে লাল রাজ্যগুলোর মাটিতেও নতুন এক রঙ ফুটে উঠবে, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের রঙ।
কুইন্স থেকে কানসাস, আমেরিকার শ্রমজীবী মানুষ জেগে উঠছে। এবার হয়তো তারা সত্যিই নিজেদের জন্য ভোট দেবে।