চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

দুই বিপর্যয়ে ফিলিস্তিনের ট্র্যাজেডি

দুই বিপর্যয়ে ফিলিস্তিনের ট্র্যাজেডি

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

৭ অক্টোবর, ২০২৫ | ১২:১৯ অপরাহ্ণ

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এতে ৬৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুতি, হাসপাতাল, স্কুল ও জাতিসংঘ আশ্রয়কেন্দ্র পর্যন্ত ধ্বংস হয়। এই বিপর্যয়কে অনেকে বলছেন ‘নতুন নাকবা’, ১৯৪৮ সালের সেই ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি, তবে আরও নির্মম আকারে।

১৯৪৮: প্রথম নাকবা- নির্বাসনের ইতিহাস

ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণার পর ১৯৪৮ সালে সংঘটিত হয় ফিলিস্তিনিদের গণ-উচ্ছেদ। জায়নিস্ট বাহিনীর হাতে ৫০০টিরও বেশি গ্রাম ও শহর ধ্বংস হয়, প্রায় সাত লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি দেশছাড়া হন। দেইর ইয়াসিনের মতো গণহত্যা তাদের পালাতে বাধ্য করে। এই নির্বাসিত জনগোষ্ঠীই পরে গাজা, পশ্চিম তীর, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ায় আশ্রয় নেয়, যেখানে তারা পরিণত হয় স্থায়ী শরণার্থীতে।

 

২০২৩: দ্বিতীয় নাকবা- ধ্বংসের মধ্যে বন্দী এক জাতি

 

৭৫ বছর পর সেই নির্বাসিতদের পরবর্তী প্রজন্মের ওপর নেমে আসে আরেক বিপর্যয়। গাজা আজ বিশ্বের বৃহত্তম খোলা কারাগারে পরিণত। অবরোধ, বিমান হামলা, খাদ্য ও ওষুধের সংকটে প্রতিটি পরিবার একাধিকবার বাস্তুচ্যুত। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজার প্রায় পুরো জনসংখ্যাই অন্তত একবার ঘরছাড়া হয়েছে।

 

তবে পার্থক্য হলো, এবার তাদের পালানোর পথই নেই। ১৯৪৮-এ ফিলিস্তিনিরা সীমান্ত পেরিয়ে পালাতে পেরেছিল; কিন্তু ২০২৩-এ মিসর ও ইসরায়েল সীমান্ত বন্ধ, সুতরাং তারা বন্দী নিজেদের ভূমিতেই।
সহিংসতার ধরন: নির্বাসন বনাম নিঃশেষকরণ

 

১৯৪৮ সালের নাকবা ছিল মূলত ‘জাতিগত নির্মূল’ বা ethnic cleansing-এর ফল;

যার উদ্দেশ্য ভূমি থেকে মানুষ সরিয়ে দেওয়া।

অন্যদিকে, ২০২৩ সালের গাজা অভিযান ছিল ‘গণবিনাশ’ (এবহড়পরফব)-এর প্রকৃত উদাহরণ; যার উদ্দেশ্য মানুষকে সরানো নয়, বরং তাদের বাসযোগ্য পরিবেশই মুছে ফেলা। হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, এমনকি সাংবাদিকদের কার্যালয় পর্যন্ত টার্গেট হয়।

 

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

১৯৪৮ সালে বিশ্বের মনোযোগ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইহুদি রাষ্ট্র গঠনে; তাই নাকবা প্রায় উপেক্ষিত থেকে যায়।

কিন্তু ২০২৩ সালে যুদ্ধের প্রতিটি মুহূর্তই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ করেছে। তবু পশ্চিমা সরকারগুলোর কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তা ইসরায়েলের দিকেই থেকেছে।

একই আদর্শের ধারাবাহিকতা

 

উভয় ঘটনার কেন্দ্রে এক আদর্শ, জায়নিস্ট উপনিবেশবাদ। ১৯৪৮-এ যার লক্ষ্য ছিল ভূমি দখল করে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন; ২০২৩-এ লক্ষ্য একই থেকেছে, তবে এবার বাসযোগ্যতাই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
শেষ কথা

 

১৯৪৮ সালে নাকবা জন্ম দিয়েছিল এক রাষ্ট্রের, ইসরায়েল। ২০২৩ সালের নাকবা জন্ম দিয়েছে এক প্রতিরোধচেতনার ফিলিস্তিনের। দুই বিপর্যয়ই ফিলিস্তিনিদের জন্য বেদনাদায়ক, কিন্তু আজকের প্রজন্মের চোখে ২০২৩ সালের গাজা কেবল ধ্বংস নয়, এটি মানবতার বিবেকের পরীক্ষা। ইতিহাস একদিন বিচার করবে কে মুক্তির পক্ষে ছিল, আর কে ছিল নিপীড়নের পক্ষে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন