চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

গণহত্যা শুরুর দুই বছর

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের ন্যায়সঙ্গত আহ্বান

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী

৭ অক্টোবর, ২০২৫ | ১১:২০ পূর্বাহ্ণ

দুই বছর আগে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে আবারও আগুনে জ্বলে উঠেছিল। সেই দিনের হামাসের আকস্মিক আক্রমণকে বিশ্ব ইতিহাসে ‘ট্রিগার’ বলা হলেও বাস্তবে সেটি ছিল এক দীর্ঘ দমিত জাতির বিস্ফোরিত আর্তনাদ। ৭৫ বছরের দখল, বঞ্চনা ও অপমানের প্রতিক্রিয়া জমে উঠেছিল গাজার প্রতিটি ইটের ভেতর। কিন্তু তার জবাবে যে ভয়াবহ গণহত্যা, নির্বিচারে শিশু-নিধন ও ধ্বংসযজ্ঞ ইসরায়েল চালায়, তা মানবসভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে, গাজায় যা ঘটেছে তা নিছক যুদ্ধ নয়, এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা (Genocide)। স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির, কোনটিই রক্ষা পায়নি। এক কোটি মানুষের এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের পৃথিবীর বৃহত্তম খোলা কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। অথচ বিশ্বশক্তিগুলো নীরব দর্শক হয়ে থেকেছে; কেউ কেউ আবার অস্ত্র, অর্থ ও ক‚টনৈতিক ছাতার জোগান দিয়েছে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলকে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে বোঝার জন্য এটিকে ‘সন্ত্রাস’ নয়, ‘অধিকার-সংগ্রাম’ হিসেবে দেখা জরুরি। যেমন একদা নেলসন ম্যান্ডেলা বা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা অন্যায় দখলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, তেমনি আজ ফিলিস্তিনিরা অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে লিপ্ত। গাজা বা পশ্চিম তীরের প্রতিটি তরুণ জানে, তারা হয় বন্দী, নয় শহীদ; কিন্তু পরাজিত নয়। তাদের প্রতিরোধ কেবল অস্ত্রের নয়, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও জাতিসত্তার মধ্যেও দৃঢ়ভাবে গেঁথে আছে।
এই দুই বছরে বিশ্ব জনমতও বদলেছে। আমেরিকা ও ইউরোপের তরুণ প্রজন্ম, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, এমনকি ইহুদি শান্তিকর্মীরাও এখন উচ্চারণ করছেন, ‘Not in our name.’ তাদের কণ্ঠে উঠে এসেছে মানবিক বিবেকের দাবি, ‘গাজায় অবরোধ ও দখল বন্ধ হোক, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক’।
আজ, এই বার্ষিকীতে, আমাদের প্রশ্ন করা উচিত, কেন আধুনিক পৃথিবীতে একটি জাতি এখনও মুক্তির জন্য রক্ত দিচ্ছে? কেন আন্তর্জাতিক আইন কেবল দুর্বলদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হয়? ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের পক্ষে অবস্থান নেওয়া মানে কোন গোষ্ঠীকে সমর্থন নয়; বরং এটি মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো, ঔপনিবেশিক অবিচারের বিরুদ্ধে নৈতিক প্রতিবাদ।
গাজার ধ্বংসস্ত‚পের মধ্যেও এক নবজন্ম ঘটছে; নবীন প্রজন্মের চোখে প্রতিজ্ঞা, ‘আমরা হার মানবো না।’ ফিলিস্তিন আজ শুধু ভূখণ্ডের নাম নয়, এটি বিশ্ব বিবেকের পরীক্ষা, ন্যায় ও মানবতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিচ্ছবি।

লেখক : সম্পাদক, দৈনিক পূর্বকোণ

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন