চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

ইসরায়েলের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইরানে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

ইসরায়েলের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইরানে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৪ অক্টোবর, ২০২৫ | ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে অভিযুক্ত ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। শনিবার তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ইরানের বার্তা সংস্থা মেহের- এর বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। তবে দণ্ডিতদের পরিচয় জানানো হয়নি।

 

মেহের- এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যোগসাজশ থাকা একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার সকালে খুজেস্তানে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মেহের জানিয়েছে, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্যকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া খোররামশহরে বোমাবর্ষণসহ একাধিক সহিংস ঘটনার দায়ও স্বীকার করেছিল তারা।’

 

এর আগে সোমবার ইসরায়েলের হয়ে কাজ করা আরেকজন ‘গুপ্তচরের’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান। ইরানের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট ‘মিজান অনলাইন’ জানায়, বাহমান চৌবি আসল নামের ওই ব্যক্তিকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

 

এ বছরের জুনে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে ইরানের সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানীসহ শত শত মানুষ নিহত হন। যুদ্ধে উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। যুদ্ধ শেষে ইরান ঘোষণা দেয়, ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে সন্দেহভাজনদের দ্রুত বিচার করা হবে। এর পর থেকে দেশটিতে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বেশ কয়েকজনের।

 

এর আগে আগস্টের শুরুতে রুজবেহ ভাদি নামের এক ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করে ইরান। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, যুদ্ধে নিহত এক পরমাণু বিজ্ঞানীর তথ্য ইসরায়েলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। গত ৯ আগস্ট ইরানের বিচার বিভাগ জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও ২০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

 

এদিকে গত জুলাইয়ে ইরানের সংসদে নতুন একটি আইন পাস করা হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থাকলেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। ইসরায়েল ছাড়াও অন্য ‘শত্রু’ দেশগুলোর সঙ্গেও ইরানের কোনো মানুষ যোগাযোগ রাখতে পারবে না।

 

নতুন আইনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো, গুপ্তচরগিরি; ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য শত্রু দেশের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ‘পৃথিবীতে দুর্নীতির’ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। যার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। বিশেষভাবে ইসরায়েলের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, যারা ইসরায়েলকে সামরিক, আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে।

 

অন্যদিকে, স্টারলিংকসহ অন্যান্য অননুমোদিত ইন্টারনেট সেবার সরঞ্জাম ক্রয়, বিক্রি ও কাছে রাখা গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। কেউ এ অপরাধে অভিযুক্ত হলে তাকে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড পেতে হবে। আর যারা এসব নিষিদ্ধ যন্ত্রাংশ ১০টির বেশি উৎপাদন বা আমদানি করবে, তাদের ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

 

এছাড়া নরওয়ে ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘আইএইচআর’ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম ২৬ দিনে ৫৫ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান সরকার। আইএইচআরের দাবি, হিজাব বিতর্ক ঘিরে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে ইরান প্রশাসন। তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ৫৫ জনই হিজাব বিতর্কে অংশ নেননি। এছাড়া হিজাব প্রসঙ্গে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বর্তমানে ১০৭ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। আরেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হিজাব বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে এ মাসে এ পর্যন্ত চার জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে কনিষ্ঠতমের বয়স ১৮ বছর।

 

আইএইচআরের ডিরেক্টর মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর করা মৃত্যুদণ্ডগুলোর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। মূলত মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করতেই এসব করা হচ্ছে।’

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন