চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

ফিলিস্তিনকে আজ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য

ফিলিস্তিনকে আজ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য

আর্ন্তজতিক ডেস্ক

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। আজ রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এক বিবৃতির মাধ্যমে এই ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।

 

এর আগে, জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেছিলেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজী না হলে এবং দ্বি – রাষ্ট্রীয়(টু-স্টেট) সমাধানের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই শান্তি চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হলে সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।

 

ওই ঘোষণার পর এখন এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

 

এই পদক্ষেপ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে, যখন কি না সরকারগুলো বলছিল, শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবং সর্বোচ্চ প্রভাবের সময়ে স্বীকৃতি আসা উচিত।

 

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। আজ রোববার বিকেলে এক বিবৃতির মাধ্যমে এই ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।

 

এর আগে, জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেছিলেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজী না হলে এবং দ্বি – রাষ্ট্রীয়(টু-স্টেট) সমাধানের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই শান্তি চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হলে সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।

 

ওই ঘোষণার পর এখন এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

 

এই পদক্ষেপ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে, যখন কি না সরকারগুলো বলছিল, শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবং সর্বোচ্চ প্রভাবের সময়ে স্বীকৃতি আসা উচিত।

 

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এর আগে বলেছিলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত’ করে।

 

তবে, যুক্তরাজ্যের মিনিস্টাররা যুক্তি দেন এই বলে যে, দীর্ঘমেয়াদী শান্তি চুক্তির আশা বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই কাজ করার একটা নৈতিক দায়িত্ব ছিল।

 

সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে।

 

তারা গাজার দুর্ভিক্ষ ও সহিংসতার চিত্র তুলে ধরেছেন যেটি প্রধানমন্ত্রী আগেই ‘অসহনীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।

 

গাজা শহরে ইসরায়েলের সর্বশেষ স্থল- অভিযানে লাখ লাখ মানুষকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

 

এই অভিযানকে জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা ‘বিপর্যয়কর’ বলে বর্ণনা করেছেন।

 

সপ্তাহের শুরুতে, জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, গাজায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে।

 

তবে ইসরায়েল জাতিংঘের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে, এটিকে ‘বিকৃত ও মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেছে।

 

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের অব্যাহত সম্প্রসারণকে তুলে ধরেন।

 

যেটি আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী অবৈধ কারণ ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বা ‘কি ফ্যাক্টর’।

 

জুলাই মাসে যখন স্বীকৃতির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল তখন যুক্তরাজ্যের বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বিতর্কিত ‘ই-১’ সবতি স্থাপন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন।

 

সেসময় সমালোচকরা সতর্ক করে বলেছেন, এটি একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আশার অবসান ঘটাবে।

 

তিনি বলেন, ” পশ্চিম তীরে আমরা যে ব্যাপক সম্প্রসারণ দেখছি, বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা দেখছি এবং ই-১ উন্নয়ন গড়ে তোলার যে উদ্দেশ্য এবং ইঙ্গিত আমরা দেখছি তারই ফলস্বরূপ একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পরিণতি।”

 

এ মাসের শুরুতে স্যার স্টার কিয়ারমারের সাথে দেখা করার সময় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতির জন্য তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

 

ডাউনিং স্ট্রিটে এই দুই নেতাই একমত হয়েছেন যে, ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত শাসন ব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।

 

কনজারভেটিভ নেত্রী কেমি বেডেনক বলেছেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান দেখতে চান।

 

কিন্তু সপ্তাহের শেষে টেলিগ্রাফে এক লেখায় তিনি বলেন, “এটা অবশ্যম্ভাবী। তবে এ সময়ে জিম্মিদের মুক্ত করা ছাড়াই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা হবে সন্ত্রাসবাদের জন্য পুরস্কার স্বরূপ।”

 

এদিকে, হামাস যাদের জিম্মি করেছে, তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে শনিবার এক খোলা চিঠি দিয়েছেন।

 

তাতে তারা অনুরোধ করেছেন, বাকি থাকা ৪৮ জনের মধ্যে যে ২০ জন এখনও জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে, তাদের ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এই পদক্ষেপ না নেওয়া হোক।

 

তারা খোলা চিঠিতে লিখেছেন, আসন্ন স্বীকৃতির ঘোষণায় ” আমাদের প্রিয়জনদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নাটকীয়ভাবে জটিল প্রচেষ্টা করা হয়েছিল।”

 

” হামাস ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তকে বিজয় হিসেবে উদযাপন করেছে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে এসেছে।”

 

সরকারের সূত্র জানিয়েছে, সামনের সপ্তাহগুলোতে মিনিস্টাররা হামাসের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরবর্তী পদক্ষেপগুলি নির্ধারণ করবেন।

 

এই সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছিলেন, তিনি স্বীকৃতির সাথে একমত নন।

 

স্যার কিয়ের স্টারমার এই সপ্তাহে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের জন্য ইসরায়েলকে “গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে এবং দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই শান্তির প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনা পুনরুজ্জীবিত করতে ” একটি সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলেন।

 

জুলাই মাসে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ” আমি সবসময় বলেছি, আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে একটি সঠিক শান্তি প্রক্রিয়ার অবদান হিসেবে স্বীকৃতি দেব, যখন দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সর্বোচ্চ প্রভাব থাকবে।”

 

” এই সমাধানটি এখন হুমকির মুখে, এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময় ” বলেন তিনি।

 

পর্তুগাল, ফ্রান্স, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছে।

 

এদিকে, গতবছরই স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছিল।

 

জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

কিন্তু দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো সীমানা নেই, কোনো রাজধানী নেই এবং কোনো সেনাবাহিনী নেই যা এই স্বীকৃতিকে মূলত প্রতীকী করে তোলে।

 

দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বলতে পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনকে বুঝায় যেটির রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।

 

ইসরায়েল বর্তমানে পশ্চিম তীর এবং গাজা উভয়ই দখল করে আছে যেটির অর্থ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের তাদের ভূমি এবং জনগণের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।

 

লেবার পার্টির ভেতরে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি সমর্থন করে আসছেন।

 

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপ বাড়ছে বিশেষ করে তার দলের বামপন্থী এমপিদের কাছ থেকে।

 

জুলাই মাসে তার ভাষণের কিছু আগে, সরকারকে অবিলম্বে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অর্ধেকেরও বেশি লেবার এমপি একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

 

তবে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার যখন স্বীকৃতির পথ নির্ধারণ করেছিল, তখন কেন হামাসের ওপর নয় বরং ইসরায়েলের ওপর শর্ত আরোপ করেছিল।

 

দ্য চিফ রাব্বি, স্যার এফ্রাইম মিরভিস সরকারকে এই সিদ্ধান্ত স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন।

 

” এই অভিপ্রেত স্বীকৃতি কার্যকর বা গণতান্ত্রিক ফিলিস্তিন সরকারের ওপর নির্ভরশীল নয়, এমনকি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে মৌলিক প্রতিশ্রুতির ওপরও নির্ভরশীল নয় ” বলেন তিনি।

 

” আশ্চর্যজনক হলো এটি জিম্মি থাকা ৪৮ জনের মুক্তির ওপরও শর্তাধীন নয়।”

 

হামাসের জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার দাবিতেও কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে সরকারি সূত্রগুলো জোর দিয়ে জানিয়েছে।

 

কিন্তু পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা যুক্তি দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রত্ব বা স্টেটহুড ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার এবং হামাসের ওপর নির্ভর করা যাবে না। যেটিকে সরকার একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখে।

 

বৃহস্পতিবার চেকার্সে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আতিথেয়তার সময় স্যার কিয়ের স্টারমার আবারও জানান, হামাস ভবিষ্যতের কোনও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে “কোনও ভূমিকা” রাখতে পারবে না।

 

২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা অভিযান শুরু করে।

 

যাতে প্রায় বারোশো জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

 

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬৪ হাজার ৯৬৪ জন নিহত হয়েছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা। 

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন