যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে ফোনালাপ শুরু করেছেন। ওয়াশিংটন আশা করছে, এই আলোচনার মাধ্যমে মস্কো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে এবং তিন বছর ধরে চলা সংঘাতের স্থায়ী সমাধানে এগিয়ে আসবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জিএমটি সময় ১৪০০টা থেকে দুই নেতা ফোনে কথা বলছেন। হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ড্যান স্ক্যাভিনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, আলোচনা ভালোভাবে এগোচ্ছে এবং এখনও চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে ইউক্রেন সম্মতি দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই সংঘাতে কয়েক লাখ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে, দশ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং বহু শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গত সপ্তাহে পুতিন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে তিনি নীতিগতভাবে সমর্থন করেন। তবে রুশ বাহিনী লড়াই চালিয়ে যাবে যতক্ষণ না গুরুত্বপূর্ণ কিছু শর্ত পূরণ হয়।
ট্রাম্প আশা করছেন, পুতিনকে তিনি যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে পারবেন এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তির দিকে অগ্রসর হবেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া এবং জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ মস্কোর হাতে যাওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত করেছেন।
ট্রাম্প সোমবার এক পোস্টে বলেছেন, চূড়ান্ত চুক্তির অনেক দিক নিয়ে একমত হওয়া গেছে, তবে এখনও অনেক কাজ বাকি। প্রতি সপ্তাহে দুই পক্ষের আড়াই হাজার সেনা মারা যাচ্ছে, এটি এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, দুই নেতা ইউক্রেন সংঘাতের নিষ্পত্তি এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে আলোচনা করবেন। এই ফোনালাপ যতক্ষণ প্রয়োজন, ততক্ষণ চলবে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ১২ ফেব্রুয়ারির ফোনালাপ এবং পরবর্তী কূটনৈতিক সংলাপের পর দুই নেতার মধ্যে কিছুটা বোঝাপড়া হয়েছে। তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং ইউক্রেন সংকট নিয়ে এখনও বহু বিষয়ে আলোচনা বাকি আছে।
সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপস নয়: জেলেনস্কি
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠককে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী মিত্ররা সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছে। ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার আগ্রাসনকে সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, পুতিন ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন।
জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেছেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস করা হবে না এবং রাশিয়াকে দখলকৃত ভূখণ্ড ছাড়তেই হবে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, মস্কো যদি দখলকৃত ভূখণ্ড রাখতে পারে, তবে তাদের আগ্রাসন ইউক্রেনেই থামবে না।
২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির আগ্রাসনের পর পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বর্তমানে রাশিয়ার দখলে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা রয়েছে।
পুতিন দাবি করেছেন, ন্যাটোর সম্প্রসারণ রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে, তাই তিনি ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়েছেন। তিনি চেয়েছেন, ইউক্রেন পশ্চিমা সামরিক জোটে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করুক।
পুতিন আরও বলেছেন, রাশিয়াকে ইউক্রেনের দখলকৃত ভূখণ্ড রাখতে হবে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে এবং কিয়েভকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। যুদ্ধকালীন আইন কার্যকর থাকায় জেলেনস্কির অধীনে নির্বাচন হয়নি।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে মস্কোর ঘনিষ্ঠ করেছেন এবং পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে শুল্ক এবং ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে মতবিরোধ তৈরি করেছেন। যদিও পুতিনের প্রতি তার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার প্রশাসন ক্রেমলিনের ওপর চাপ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ