গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতার অবসানে সিদ্ধান্তমূলক ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) মিসরের রাজধানী কায়রোতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের একটি বিশেষ অধিবেশনে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এমন এক সময়ে একত্রিত হয়েছি যখন অধিকৃত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ১৪ মাস ধরে ইসরায়েলি আগ্রাসন ও বর্বর গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। এই বর্বরতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মেনে চলা আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি, আইন ও কনভেনশনের প্রতি ইসরায়েলের নির্লজ্জ অবজ্ঞায় আমরা চরম হতাশার মধ্যে আছি। লেবাননে যেভাবে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে এটি আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে এবং এটি সমগ্র অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি বয়ে আনতে পারে, যা কেবল অর্থনীতি নয়, বৈশ্বিক সমাজ ও রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে।
তিনি আরও বলেন, কায়রো থেকে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে তাদের এই অস্তিত্বের সংকটের সময়ে আমাদের ঐক্য ও অটুট অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। বাংলাদেশ বরাবরই ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে দৃঢ়ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা সবসময় ইসরায়েলের অব্যাহত অবৈধ দখলদারিত্ব এবং সহিংস দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়েছি।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা এ সংকটের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে শান্তি ও সম্প্রীতিতে পাশাপাশি বসবাস করার মতো একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পক্ষে অটল আছি। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭’র পূর্ববর্তী সীমানার ভিত্তিতে ফিলিস্তিনকে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ও কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশিরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ফিলিস্তিনিরা হেলাফেলার যোগ্য নয়। প্রতিটি ফিলিস্তিনির জীবন গুরুত্বপূর্ণ। এটা এমন কোন বিষয় নয় যা শুধু মুসলমানদের জন্য উদ্বেগজনক, বরং এটি একটি সর্বজনীন বিষয় যেখানে মানুষের মর্যাদা পরীক্ষার সম্মুখীন। এটি দুর্বলদের রক্ষায় সার্বজনীন অঙ্গীকারের একটি বিষয়। দৃঢ়তার সাথে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, লেবাননসহ সমগ্র অঞ্চলে প্রায় ৬০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক ও প্রবাসী পেশাজীবী রয়েছেন যারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গাজা, পশ্চিম তীর ও লেবাননে গণহত্যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের শামিল। দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এ কারণেই গত নভেম্বরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দাঁড়িয়ে মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধের দ্রুত তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি ফিলিস্তিন ও লেবাননে পুনর্গঠনের ব্যয়ের আনুমানিক প্রাক্কলনসহ একটি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ডি-৮ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা এর মাধ্যমে সম্পদ সংগ্রহে জন্য আন্তর্জাতিক কৌশল প্রণয়নের জন্য চাপ দিতে পারি। ডি-৮ সম্মেলনে গাজা ও লেবাননে মানবিক সংকট ও পুনর্গঠন চ্যালেঞ্জের ওপর এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করায় তিনি মিসর সরকারের প্রশংসা করেন।
পূর্বকোণ/মাহমুদ