চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চায় ৬১% মানুষ: জরিপ

অনলাইন ডেস্ক

২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:২২ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তবে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে বেশির ভাগ মানুষ (৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ) বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। আর শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতার।

১৮ দশমিক ৭ শতাংশ চান দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ নির্বাচন চান ১৮ মাসের মধ্যে। সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জনগণ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

কত দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত, এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ আর নির্বাচন কবে হওয়া উচিত সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি ১ দশমিক ১ শতাংশ।

ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে এক জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য জানা গেছে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকেরা, এসব বিষয়ে ১৩ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর ভয়েস অব আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।

জরিপটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার সম্পাদকীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অব আমেরিকার ঠিক করে দেওয়া (ক্লোজ এন্ড) প্রশ্নমালার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার অ্যাসিসটেড টেলিফোন ইন্টারভিউইং-এর মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী এক হাজার মানুষের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়।

জরিপটি করা হয়, দৈবচয়ন ডিজিটাল ডায়ালিং পদ্ধতিতে। বাংলাদেশের মুঠোফোন নম্বরগুলোর সম্ভাব্য সব ধরনের কম্বিনেশন থেকে করা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের নিজস্ব ডেটাবেজ থেকে জরিপটির নমুনা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের ২০১৭ সালে সর্বশেষ প্রকাশিত অফিশিয়াল টেলিফোন প্ল্যান থেকে এ নমুনা নেওয়া হয়। একটি আর-বেজড প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সিম্পল র‍্যান্ডম স্যাম্পলিংয়ের (এসআরএস) মাধ্যমে জরিপটির নমুনা বাছাই করা হয়েছে।

জরিপ পরিচালনার কাজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের মাধ্যমে ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের ঢাকা অফিসের কলসেন্টার থেকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ফোন করা হয়।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, জরিপটিতে মার্জিন অব এরর ৩ দশমিক ১ শতাংশ। জরিপটির উত্তরদাতারা প্রায় এক মাস আগে যেহেতু তাঁদের মতামত জানিয়েছেন, তাই এখন জরিপটি করলে এর ফলাফল অনেক ক্ষেত্রেই ভিন্ন হতে পারে।

এই জরিপের ফলাফল নিয়ে আগামী কয়েক দিন কয়েক পর্বে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে ভয়েস অব আমেরিকা। আজ থাকছে এর প্রথম পর্ব।

জরিপে অংশ নেওয়া শহরের জনগণের ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ ও গ্রামে বসবাসরতদের ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ আগামী এক বছরের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন চান। জরিপে অংশগ্রহণকারী পুরুষদের ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ নির্বাচন চান এক বছরের মধ্যে।

তরুণদের মধ্যে (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ এক বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন চান। আর ৩৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন চান।

জরিপে অংশগ্রহণকারী শহরাঞ্চলের ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ ও গ্রামীণ এলাকার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন চান। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া পুরুষদের ২০ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীদের ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। ১৮ থেকে ৩৪ বছরের তরুণদের ১৫ দশমিক ২ ও ৩৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২২ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন, দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন হওয়া উচিত।

১৮ মাসের মধ্যে আগামী নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন শহরের ১০ দশমিক ৩, গ্রামের ৮, পুরুষদের ১২, নারীদের ৫ দশমিক ২, তরুণদের (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) ৮ দশমিক ৬ এবং ৩৫ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।

চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন, শহরের ৬ দশমিক ২, গ্রামের ৫ দশমিক ৭, পুরুষদের ৬ দশমিক ৯, নারীদের ৪ দশমিক ৮, তরুণদের (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) ৭ দশমিক ৬; ৩৫ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সীদের ৪ শতাংশ মানুষ।

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বিভিন্ন দল একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে দ্রুত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। তাদের বক্তব্য, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করার পরই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, রাষ্ট্র সংস্কারের কাজগুলো শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন হলে আবার নতুন করে তাদের ভাষায় ‘ফ্যাসিবাদের’ আবির্ভাব ঘটবে। তারা বলছে, কেবল একটি নির্বাচন করার জন্য ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান হয়নি।

সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ (২৪ তারিখ প্রকাশিত) বাংলাদেশের সেনাপ্রধান রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানান, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এই সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে ভয়েস অব আমেরিকায় দেওয়া তাঁর এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদই নির্বাচনের তারিখ জানাবে।

সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও (রূপরেখা) পাওয়া যাবে। নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। তবে সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ১৯ নভেম্বর বলেছেন, অতিপ্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া হবে।

সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশের দৈনিক, বণিক বার্তাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (২০ নভেম্বর প্রকাশিত) কবে নির্বাচন হবে, সে প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার না চাইলে তিনি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেবেন।

এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী, ভোটার, উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো, জাতিসংঘসহ দেশি–বিদেশি স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।

ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার জনমত জরিপে তাই সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ এই দুটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চান ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ
‘আপনি কি মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে সব সংস্কার করার পর নাকি শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত জরুরি সংস্কার করার পর নির্বাচন আয়োজন করা উচিত—এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে বেশির ভাগ মানুষ (৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ) মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। আর শুধু নির্বাচ সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। ১ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না এবং দশমিক ৫ শতাংশ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকার যে যে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করে, সেসব সংস্কার শেষ করেই আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা উচিত বলে যারা মনে করেন তাঁদের বেশির ভাগই বিচার বিভাগ, সংবিধান, অর্থনৈতিক খাত, পুলিশ, ও নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত সংস্কারগুলো করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

তাঁদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। পুলিশ সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ, বিচার বিভাগ সংস্কারের পক্ষে ৯৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক খাতে সংস্কারের পক্ষে ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার চান ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা।

আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় ভালো, খারাপ, নাকি একই রকম করছে—এমন প্রশ্নের জবাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় দেশ পরিচালনায় ভালো করছে। বাংলাদেশের ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় দেশ পরিচালনায় ভালো করছে। তবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ শাসনে আওয়ামী লীগের চেয়ে খারাপ করছে বা একই রকম করছে। যাঁরা মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে দেশ শাসনে খারাপ করছে, তাঁদের সংখ্যা ২০ দশমিক ৪ শতাংশ আর একই রকম করছে বলে মত দিয়েছেন ২০ দশমিক ১ শতাংশ। জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে দশমিক ৮ শতাংশ এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন তাঁরা জানেন না আর দশমিক ৩ শতাংশ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।

যাঁরা গ্রামে থাকেন (৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ) তাঁদের চেয়ে যাঁরা শহরে থাকেন (৬১ দশমিক ৯ শতাংশ) উত্তরদাতারা অন্তর্বর্তী সরকার বেশি ভালো করছে বলে মত দিয়েছেন।

পুরুষ উত্তরদাতারা (৬২ শতাংশ) নারী উত্তরদাতাদের (৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ) তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনায় বেশি ভালো বলে মত দিয়েছেন। তরুণ উত্তরদাতাদের (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) মধ্যে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে ভালো করছে আর ৩৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে এই মত জানিয়েছেন ৫৮ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা। ৬৩ দশমিক ২ শতাংশের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে ভালো করছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব ক্ষেত্রে ভালো কাজ করছে বলে জরিপের উত্তরদাতারা মনে করছেন, তার মধ্যে একটি হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, যা ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন প্রশাসনের অন্যতম উদ্বেগের বিষয় ছিল।

এই প্রেক্ষাপটে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। পরে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ১৫ নভেম্বর সেনাবাহিনীকে দেওয়া ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরও দুই মাসের জন্য বাড়িয়েছে সরকার।

তবে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরদাতা (৬৩ দশমিক ২ শতাংশ) মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে ভালো করছে। ২১ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন এটি এখন আরও খারাপ, আর ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুই সরকারের আমলে একই।

উত্তরদাতাদের মধ্যে পুরুষেরা (৬৭ শতাংশ) অন্যদের তুলনায় বেশি সংখ্যায় মত দিয়েছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। নারীদের মধ্যে এমনটি মনে করেন ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা। তরুণদের (১৮ থেকে ৩৪) মধ্যে ৬২ দশমিক ৭ এবং ৩৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগের চেয়ে সফল। আর শহরের উত্তরদাতাদের ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ ও গ্রামের উত্তরদাতাদের ৬২ দশমিক ৭ শতাংশ একই মত জানিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে ভালো করছে, উত্তরদাতাদের (৬৩ দশমিক ২ শতাংশ) এই মত অবশ্য জনগণের নিরাপত্তার মতো একটি বড় অনুভূতিতে সেভাবে রূপান্তরিত হয়নি। যদিও প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা (৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ) মনে করেন যে তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ, প্রায় একই সংখ্যক উত্তরদাতা জানিয়েছেন (৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ) তাঁরা আওয়ামী আমলেই বেশি বা একই রকম নিরাপদ বোধ করেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বেশি নিরাপদ বোধ করেন ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ

প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা (৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ) মনে করেন যে তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ। প্রায় একই সংখ্যক উত্তরদাতা জানিয়েছেন (৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ) তাঁরা আওয়ামী আমলেই বেশি বা একই রকম নিরাপদ বোধ করেছেন।

আওয়ামী আমলেই নিজেদের অন্তর্বর্তী সরকারের সময় থেকে বেশি নিরাপদ বোধ করছেন, এমন উত্তরদাতাদের সংখ্যা ২৩ শতাংশ, আর ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ মনে করেন দুই সরকারের আমলে নিরাপত্তার দিক থেকে তাঁরা একই রকম বোধ করছেন।

শহরের উত্তরদাতাদের ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ আমলের তুলনায় বেশি নিরাপদ বোধ করেন যেখানে গ্রামীণ উত্তরদাতাদের মধ্যে এমনটি বোধ করেন ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ। পুরুষ উত্তরদাতাদের ৫২ দশমিক ১ ও নারী উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আগের সরকারের সময়ের থেকে বেশি নিরাপদ বোধ করেন।

এই আমলে আওয়ামী লীগ আমলের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি নিরাপদ বোধ করার কথা জানিয়েছেন ৩৫ বছরের বেশি বয়সী উত্তরদাতাদের ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং তরুণদের মধ্যে (১৮ থেকে ৩৪ বছর) ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন