শ্রীলঙ্কায় আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনে দেশটির নতুন বামপন্থি প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের নির্বাচনী জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) ভূমিধস জয় পেয়েছে। বিধানসভার ২২৫ আসনের মধ্যে জোটটি ১৫৯টি আসনে জয়লাভ করেছে। খবর এএফপি, বিবিসির
আজ শুক্রবার দেশটির নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া প্রাথমিক ফলাফলে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টির জন্য দায়ী দলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে এনপিপিকে বেছে নেন ভোটাররা।
শ্রীলঙ্কায় আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গতকাল বৃহস্পতিবার। পার্লামেন্টের আসনসংখ্যা ২২৫। এর মধ্যে ১৯৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। বাকি ২৯টি ‘জাতীয়ভিত্তিক আসন’। রাজনৈতিক দলগুলো পাবে ১৯৬ আসনে প্রাপ্ত ভোটের হিস্যা অনুযায়ী।
বামপন্থি মার্ক্সসবাদী নেতা দিশানায়েকে গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। নির্বাচনের আগে তিনি দুর্নীতি, দেশ থেকে চুরি যাওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দুই বছর পর অথনৈতিক বিপর্যয় দেশটির জনগণের ওপর ব্যাপক ভোগান্তি তৈরি হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট অনুঢ়া তার সমর্থন জোরদার করার জন্য আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
দেশটির নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে তথ্য অনুযায়ী, বিধানসভার ২২৫টি আসনের মধ্যে এনপিপি ১৫৯টি আসনে জয় পেয়েছে। তারা ভোট পেয়েছে ৬২ শতাংশ। এছাড়াও আরও অনেক আসনে জয়ের পথে রয়েছে জোটটি। ফলে এই নির্বাচনে বড় জয় পাচ্ছে এনপিপি জোট।
এনপিপির প্রধান প্রতিপক্ষ সমাগি জনা বালাবেগায়া (এসজেবি) ১৩টি আসনে জয় পেয়েছে। ভোট পেয়েছে ১৯ শতাংশ।
নির্বাচনে এনপিপি সমর্থক আইটি পেশাজীবি চানাকা রাজাপক্ষ আজ শুক্রবার এএফপিকে বলেন, ‘দুর্নীতি ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ ভোট দিয়েছে।’
১৯৪৮ সালে ব্রিটেন থেকে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা লাভের পর প্রথমবারের মতো তামিল অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলীয় জেলা জাফনাতে এনপিপি সবচেয়ে বেশি ভোটে জয়লাভ করে।
৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে অনূঢ়া বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম, এবারের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে ভোট পাব। একটি শক্তিশালী পার্লামেন্ট গঠনের জন্য এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শ্রীলঙ্কার জনগণের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট।’
অনূঢ়া আরও বলেন, শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন এসেছে, যার শুরু গত সেপ্টেম্বরে। এই পরিবর্তন অবশ্যই অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনে জয়লাভ করে এনপিপি সংসদে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।’
পুলিশ বলছে, নয় ঘণ্টা ভোটগ্রহণের সময়ে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ কনস্টেবলসহ তিনজন নির্বাচনকর্মী অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন। গত সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবার ভোট আরও কম পড়বে ধারণা করলেও ৮০ শতাংশ মানুষ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
প্রায় ২৫ বছর এমপি ছিলেন অনুঢ়া দিশানায়েক। অল্প সময়ের জন্য একবার কৃষিমন্ত্রীও হন তিনি। গত নির্বাচনে এনপিপি বিধানসভায় মাত্র তিনটি আসনে জয় পেয়েছিল। তাই পার্লামেন্টে নিজ জোটের আসনসংখ্যা বাড়াতে তিনি আগাম নির্বাচন দেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পার্লামেন্টে অনূঢ়ার জোটের আসন বাড়ার অর্থ হবে, তার হাত শক্তিশালী হওয়া। সে ক্ষেত্রে তিনি তার অর্থনৈতিকসহ অন্যান্য নীতি বাস্তবায়নে গতি আনতে সক্ষম হবেন।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। বৌদ্ধ সংখাগরিষ্ঠ দেশটির ইতিহাসে আর্থিক বিপর্যয় ছিল ভয়াবহ। স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি খাদ্য, জ্বালানি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছিল দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। ফলে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা দেশের মানুষ। ক্ষমতা ছেড়ে গোতাবায়া দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এর প্রায় দুই বছর পর গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে জয়ী হন বামপন্থী রাজনীতিক অনূঢ়া। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। এরপর রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন ছাড়াও বিভিন্ন সংস্কার করেন জেভিপি পার্টির নেতা দিশানায়েকে।
এরপর তিনি গত ১৪ নভেম্বর আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটিতে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। প্রত্যাশা অনুযায়ী, এই নির্বাচনে বড় জয় পেল অনূঢ়ার জোট।
পূর্বকোণ/এএইচ