চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইসরায়েলকে ছাড়াই মধ্যপ্রাচ্যে সুস্পষ্ট পরিবর্তনের ‘হাওয়া’

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

২১ অক্টোবর, ২০২৪ | ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

[গত বছর ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে প্রস্তুত ছিল। তবে এখন, গাজায় এক বছর ধরে চলা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, রাজতান্ত্রিক সৌদি আরব ঐতিহ্যগত শত্রু ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করতে শুরু করেছে। ]

এই পালাবদল মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করেছে। যা ক’বছর আগেও কল্পনা করা কঠিন ছিল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
গত বছর সৌদি আরব একটি স্বীকৃত চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল। এতে মধ্যপ্রাচ্যের মৌলিক রূপান্তর ঘটতে পারতো এবং এর ফলে ইরান ও তার মিত্রদের আরও বিচ্ছিন্ন করা যেতো। তবে এই চুক্তি এখন অনেক দূরের বিষয় হয়ে পড়েছে। গাজায় চলমান যুদ্ধ ও হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের হত্যার প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব অবস্থান পরিবর্তন করেছে। রিয়াদ এখন ইসরায়েলের সঙ্গে কোনও ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার শর্ত হিসেবে ‘একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরছে।
নিঃসন্দেহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার বিপরীতে মধ্যপ্রাচ্যে একটি ভিন্নধর্মী ক‚টনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে। এ মাসে উপসাগরীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছেন। যা সংকটময় এ অঞ্চলে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি সম্প্রতি সৌদি আরব সফর করেন এবং তারপর ইরাক, ওমান, জর্ডান, মিসর ও তুরস্ক সফর করেন। বিশেষত: মিসর সফর ছিল গত ১২ বছরে প্রথমবারের মতো কোনও ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশটিতে ভ্রমণ।
আরাকচি তার বক্তব্যে বলেছিলেন, গাজা ও লেবাননে চলমান যুদ্ধ এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখন একটি অভিন্ন উদ্বেগ ভাগাভাগি করছে। যদিও ইসরায়েল ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে সৌদি কর্মকর্তারা একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছেন। সৌদি আরবের রাজ উপদেষ্টা এবং নিওম প্রকল্পের বোর্ড সদস্য আলী শিহাবি বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনও সম্পর্ককে আরও বিষাক্ত করে তুলেছে। ইসরায়েল যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকৃত তৎপরতা না দেখায়, তবে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার সুযোগ কম। গাজার যুদ্ধ ও এ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি আরব বিশ্বের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রভাব ফেলছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গাজার ভয়াবহ চিত্রগুলো আরব জনগণের সামনে আসায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে। সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গত ১৮ সেপ্টেম্বর এক ভাষণে স্পষ্টভাবে বলেছেন, সৌদি আরব পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে না। সম্প্রতি উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ইরান গুরুত্ব দিয়েছে।
ইরান-হিজবুল্লাহর সম্পর্ক দুর্বল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইরান নিজেকে গাজা যুদ্ধের পর নতুনভাবে কৌশলগতভাবে সংযুক্ত করছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি বলেছেন, যতদিন তেহরান রিয়াদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে, সৌদি আরবও তা গ্রহণ করবে।
গাজা থেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবন্ত চাপা পড়ে থাকা শিশুদের ছবি, মায়েরা তাদের মৃত শিশুদের জন্য শোকাহত এবং ফিলিস্তিনিরা ক্ষুধার্ত কারণ ইসরায়েল ভূখণ্ডে ত্রাণ প্রবেশে ক্রমাগত বাধা দিয়ে চলেছে- এই সমস্তকিছুই সৌদি নেতৃত্বকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ইস্যুটিকে উপেক্ষা করা অসম্ভব করে তুলেছে।
আপাতত, সৌদি আরব এবং তার উপসাগরীয় অংশীদাররা ইরানের ক‚টনৈতিক পদক্ষেপের আন্তরিকতা নিয়ে অনেকটা সন্দিহান হয়তো। কেননা ইরানের দুটি প্রক্সি, হামাস এবং হিজবুল্লাহকে ইসরায়েল দ্বারা আঘাত করা হলেও, ইরান এখনও তার তৃতীয় মিত্র, ইয়েমেনের হুথিদের অস্ত্র ও সমর্থন করে, যারা সৌদি আরবে আক্রমণ করেছে।
তারপরও আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী আরব দেশগুলো গাজার পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে তাদের অবস্থান প্রকাশ করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ বলেছেন, গাজার যুদ্ধের পর একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলকে সমর্থন করবে না। এসবকিছুই এতদঞ্চলের এ নতুন উদ্যোগের পালে দারুণ সুবাতাস বইয়ে দিচ্ছে।

শেয়ার করুন