চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৪ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

মধ্যপ্রাচ্যে শঙ্কায় অবৈধ অভিবাসীরা

মোহাম্মদ আলী

২ জুলাই, ২০২৪ | ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কুয়েতে অভিবাসী আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এ ঘোষণার আওতায় কোনো ধরনের জেল-জরিমানা ছাড়াই দেশে ফেরেন প্রচুর অবৈধ অভিবাসী। তবে নির্ধারিত সময়ে যারা দেশে ফিরতে পারেননি তারা ধরপাকড়ের শঙ্কায় রয়েছেন।

 

কুয়েতে অবৈধ প্রবাসীদের চাকরি অথবা থাকার জায়গা দিলে জেল ও জরিমানা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সেদেশের সরকার। এদিকে আবাসিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বের করে দেবে আরব আমিরাত। এ নিয়ে সেখানেও প্রবাসীরা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

 

প্রবাসীরা জানান, কুয়েতে অভিবাসী আইন লঙ্ঘনকারীদের ১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া তিন মাসের জন্য সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ দুদফায় ১৭ জুন থেকে বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে কুয়েত সরকার। পূর্বের নির্ধারিত সময়ে যেসব অবৈধ প্রবাসী বৈধ হতে পারেনি অথবা টিকিট সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দেশে যেতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের জন্য এ সুযোগ দেওয়া হয়। কারো বিরুদ্ধে যদি ফৌজদারি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে নির্ধারিত অফিসে যোগাযোগ করে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে। সাধারণ ক্ষমার নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যেসব অবৈধ অভিবাসী বৈধ হওয়ার সুযোগ হারাবেন এবং কুয়েত ত্যাগ করবেন না, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে ২০১৮ সালে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ হাজার অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন প্রায় ৮ হাজার। সর্বশেষ করোনাভাইরাস মহামারির সময় ২০২০ সালের সাধারণ ক্ষমায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি সাধারণ ক্ষমার আবেদন করেছিলেন।

 

এদিকে গত ১২ জুন কুয়েতে একটি আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৪১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় একটি রুমে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বসবাসকারী অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে কুয়েতের পুলিশ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন প্রবাসীরা। এ প্রসঙ্গে বসবাসরত প্রবাসী আবু মোহাম্মদ চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘কুয়েতে বেশিরভাগ প্রবাসী কঠিন সময় পার করছে, তল্লাশি যেভাবে চলছে অবৈধরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অনেককে বাসা ছেড়ে অন্য জায়গায় উঠতে হচ্ছে, টিকেটের জন্য ভিড় করছে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে। ৩০ জুন সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তল্লাশি বাড়িয়েছে পুলিশ। সব মিলে বেশিরভাগ প্রবাসী কুয়েতে একটা সংকটের মধ্যে রয়েছেন।’

 

এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রেসিডেন্সি বা আবাসিক নিয়ম আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এর অধীনে যারা নিয়ম লঙ্ঘন করবেন তাদের দেশটি থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেদেশের সরকার। ৬টি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ৬টি খাতের মধ্যে ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেনটিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস ও পোর্ট সিকিউরিটির নির্দেশ কার্যকর হবে। যদি কোনো ব্যক্তির রেসিডেন্সি পারমিট (আরপি) থাকেও তবু তাকে প্রশাসনিকভাবে প্রত্যাবর্তন করাতে পারবে। এ বিষয়ে যে রেজ্যুলুশন নেওয়া হয়েছে তাতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, যদি কোনো বিদেশি বেআইনিভাবে জাহাজে করে আমিরাতে প্রবেশের চেষ্টার জন্য ধরা পড়েন তাহলে তাকে বা তাদের আইনগতভাবে বের করে দেওয়া সম্ভব। এমন আরও বিষয় রাখা হয়েছে তাতে। যদি ওই ব্যক্তির কাছে কোনো এন্টি ভিসা বা আবাসিক অনুমোদন (আরপি) না থাকে, অথবা এই দুই ক্ষেত্রেই যদি মেয়াদ শেষ হয়ে থাকে, যদি তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বৈধতা নবায়নের উদ্যোগ না নিয়ে থাকেন অথবা যদি এন্ট্রি ভিসা বা আরপি বাতিল হয়ে থাকে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি আমিরাত ত্যাগের উদ্যোগ গ্রহণ করে না থাকেন- তাহলে এসব ব্যক্তিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বের করে দেওয়া হবে।

 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দুদশক আগেও বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য শতাধিক ক্যাটাগরির ভিসা উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু দক্ষ জনশক্তির অভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি শুরু হয়। এমনকি কোনো কোনো দেশ বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদান অনেকটা সংকুচিত করে ফেলে। সরকার বারবার উদ্যোগ নিয়ে ভিসার সমস্যার জট খুলে। তারপরও এখনো পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ভিসা প্রদান উন্মুক্ত করেনি।

 

এক সময় বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা উন্মুক্ত ছিল ওমানে। কিন্তু কোন ধরনের কারণ উল্লেখ না করে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদান স্থগিত করে ওমান। সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত ২৯ মে থেকে ওমানে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মাত্র ১২ ক্যাটারির নতুন ভিসার আবেদন শুরু হয়েছে।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের সভাপতি ও এনআরবি সিআইপি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী সিআইপি পূর্বকোণকে বলেন, ‘গত ২৯ মে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে ওমান সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ১২ ক্যাটাগরির ভিসা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। চলতি সপ্তাহ থেকে নতুন ভিসার আবেদন শুরু হয়েছে। খুলে দেওয়া ১২ ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে ফ্যামিলি ভিসা, জিসিসি রেসিডেন্সদের জন্য ভিজিট ভিসা, সিটিজেন স্পাউস ভিসা, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, শিক্ষক, একাউন্ট্যান্ট, ইনভেস্টর, অফিসিয়াল ও বিশেষায়িত কর্মী ভিসা।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট