আপাতদৃষ্টে চীনের সঙ্গে ভারতের একধরনের বৈরী সম্পর্ক রয়েছে। তবে এই সম্পর্ক দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব রাখছে না। চীন এখন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর আগের দুই অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
অর্থনীতিবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান জিটিআরআই যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে দেখা গেছে যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত ও চীনের মধ্যে ১১৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। ওই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে ১১৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৮৩০ কোটি ডলারের।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
জিটিআরআইয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে চীনে ভারতের রপ্তানি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৬৬৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই রপ্তানি প্রবৃদ্ধির পেছনে যেসব পণ্য মূল ভূমিকা পালন করেছে, তাদের মধ্যে ছিল লৌহ আকরিক, সুতা বা কাপড়, তাঁত পণ্য, মসলা, ফল, সবজি ও প্লাস্টিক।
অন্যদিকে চীন থেকে ভারতের আমদানি বেড়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে ভারত ১০ হাজার ১৭৫ কোটি ডলারের পণ্য চীন থেকে এনেছে। অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে, যা ভারতের প্রতিকূলে।
গত অর্থবছরে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি ১ দশমিক ৩২ শতাংশ কমে ৭ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার হয়েছে। আগের বছরে ভারতের রপ্তানি ছিল ৭ হাজার ৮৫৪ কোটি ডলার। অন্যদিকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের আমদানি ছিল ৪ হাজার ৮০ কোটি ডলারের পণ্য, যা আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম ১৫টি বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। এ সময়ে চীনে ভারতের রপ্তানি সামান্য কমলেও চীন থেকে আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ সময়ে আমদানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
জিটিআরআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, আমদানির প্রবৃদ্ধি বাণিজ্য–ঘাটতি বাড়িয়ে চলেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ অর্থবছরে এই ঘাটতি বেড়েছে ৮ হাজার ৫০৯ কোটি ডলার। ক্রমবর্ধমান আমদানির তুলনায় রপ্তানির প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় যে উদ্বেগ রয়েছে, এটা তারই প্রতিফলন।
এ সময়ে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি বিপুলভাবে বেড়েছে। ২০১৯ অর্থবছরে ভারত যেখানে ৫ হাজার ২৪১ কোটি ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে, সেখানে ২০২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৭৫২ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ভারতের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৩ হাজার ৬৭৪ কোটি ডলার।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে চার বছর চীন ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ছিল। এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। আর সাম্প্রতিক দুই অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ছিল ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার। এরপরের অবস্থান রাশিয়া (৬ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার), সৌদি আরব (৪ হাজার ৩৪০ কোটি ডলার) ও সিঙ্গাপুর (৩ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার)।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ