চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভারতের সাহারা গ্রুপের প্রধান সুব্রত রায় আর নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৫ নভেম্বর, ২০২৩ | ৪:১০ অপরাহ্ণ

সাহারা ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সুব্রত রায় আর নেই। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারসহ একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।

 

সহারা ইন্ডিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে সুব্রতের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তার মৃত্যু হয়েছে। বহু দিন ধরেই ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, মধুমেহ ছাড়াও হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।

 

এক সময়ের ভারতের নামজাদা ধনকুবের ছিলেন সুব্রত। দীর্ঘ দিন ভারতীয় ক্রিকেট দলের স্পনসর ছিল তার সংস্থা। তবে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগে জেলেও যেতে হয়েছিল সহরাকর্তাকে।

 

১৯৪৮ সালের ১০ জুন বিহারের আরারিয়াতে সুব্রতের জন্ম। গোরক্ষপুর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন। প্রাথমিকভাবে গোরক্ষপুরেই ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এরপর ১৯৭৬ সালে ধুঁকতে থাকা চিটফান্ড সংস্থা ‘সহারা ফিনান্স’কে অধিগ্রহণ করেন সুব্রত। ১৯৭৮ সালে সেটির নাম বদলে হয় ‘সহারা পরিবার’। ক্রমে ভারতের মানচিত্রে নিজেকে একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন তিনি।

 

সুব্রতের হাত ধরেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আবাসন শিল্প, সংবাদমাধ্যম এবং হোটেল ব্যবসা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল সহারা। ১৯৯২ সালে ‘রাষ্ট্রীয় সহারা’ নামে হিন্দি সংবাদপত্রের সূচনা করেন তিনি।

 

কয়েক বছর পরেই হাত দেন তার স্বপ্নের প্রকল্পে। পুণেয় ১০ হাজার একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে শুরু করেন ‘অ্যাম্বি ভ্যালি প্রকল্প’। এরপরে তিনি একটি টিভি চ্যানেলও চালু করেন। লন্ডন এবং নিউ ইয়র্কের মতো জায়গায় বিলাসবহুল হোটেলও অধিগ্রহণ করেন তিনি।

 

বিমান শিল্পেও পা জমাতে শুরু করেন সুব্রত। এয়ার সহারা নামে বিমান সংস্থা চালু করেন তিনি। তবে ‘সহারা ইন্ডিয়া’ ভারতীয় দলের স্পনসর হওয়ার পর থেকে ভারতের ঘরে ঘরে পরিচিত নাম হয়ে যান সুব্রত।

 

জমকালো জীবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকা এবং রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ওঠাবসার কারণেও সবসময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে থাকতেন সুব্রত।

 

তবে তার জীবনে ঝড় ওঠে ২০১১ সাল নাগাদ। বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সুব্রত। ২৪ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ায় তাঁর সংস্থার। যা ‘সহারা কেলেঙ্কারি’ নামে পরিচিত।

 

সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)’ সহারা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই বেআইনি ভাবে বাজার থেকে ৩৫০ কোটি ডলার তোলার অভিযোগ তোলে।

 

সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)’ সহারা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই বেআইনি ভাবে বাজার থেকে ৩৫০ কোটি ডলার তোলার অভিযোগ তোলে।

 

সহারা কর্তৃপক্ষ যদিও দাবি করেন, যে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় ব্যাঙ্কিং পরিষেবার বাইরে ছিলেন, তাদের বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে যে তালিকা সহারা দিয়েছিল, তার মধ্যে বহু বিনিয়োগকারীর হদিসই মেলেনি।

 

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৪ সালের মার্চ মাসে দোষী সাব্যস্ত হন সুব্রত। তিহাড় জেলে পাঠানো হয় তাকে। ২০১৭ সালে প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি তিহাড়েই ছিলেন।

 

এই কেলেঙ্কারি সহারা গোষ্ঠীর সুনামকে কালিমালিপ্ত করে। একে একে তাঁর অনেকগুলি সংস্থায় ধস নামে। যদিও তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেন সুব্রত। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, সেই সময় কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীকে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসানোর বিরোধিতা করার জন্যই তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

 

বিতর্ক সত্ত্বেও, ভারতীয় অর্থনীতিতে এবং যে সকল ভারতীয় ব্যাঙ্কিং পরিষেবার বাইরে ছিলেন, তাঁদের আর্থিক পরিষেবা প্রদানে সুব্রতের ভূমিকা ছিল সুস্পষ্ট।

 

বিভিন্ন সময়ে মানুষের আর্ত এবং দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও সুনাম ছিল সুব্রতের। ২০১৩ সালে বন্যা বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডে পৌঁছে গিয়েছিল সাহারা গোষ্ঠীর ত্রাণ।

 

বন্যার কবলে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়াতে এক লক্ষ পানীয় জলের বোতল, প্যাকেটজাত ফলের রস, খাবারের প্যাকেট, মোমবাতি সরবরাহ করেন সুব্রত। ২৫টি মেডিক্যাল ভ্যানেরও ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়াও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডে ভেঙে পড়া ১০০০টি বাড়ির পুনর্নিমাণের দায়িত্বও তিনি নিয়েছিলেন।

 

কার্গিল যুদ্ধের পর ১২৭ জন মৃত সেনার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সাহারা ইন্ডিয়ার প্রশংসা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী।

 

২০২০ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে ‘ব্যাড বয় বিলিয়নেয়ার্স: ইন্ডিয়া’ নামে একটি তথ্যচিত্র মুক্তি পায়। তিন এপিসোডের সেই তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত চার ব্যবসায়ী সুব্রত, বিজয় মাল্য, নিরব মোদী এবং রামলিঙ্গ রাজুর জীবন নিয়ে।

 

ভারতের এক সময়ের প্রথিতযশা চার ব্যবসায়ীর উত্থান-পতন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তৈরি হয়েছিল সেই তথ্যচিত্র।

 

২০২০ সালের ২৮ অগস্ট তথ্যচিত্রটি মুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলে বিহারের একটি আদালতের দ্বারস্থ হন সুব্রত।

 

সম্প্রতি, সুব্রত রায়ের বর্ণময় জীবন নিয়ে ছবি বানানোর কথা ঘোষণা করেছেন বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেন। ছবির নাম ‘সহারাশ্রী’। সমাজমাধ্যমের পাতায় সেই ছবির প্রথম ঝলকও প্রকাশিত হয়েছে।

 

গত ১২ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই অম্বানী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল সুব্রতকে। সেখানেই মঙ্গলবার তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। রেখে গেলেন তার স্ত্রী স্বপ্না রায়, দুই পুত্র সুশান্ত এবং সীমান্ত রায়কে।

 

২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী সুব্রতের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০০০ কোটি ডলারেরও বেশি। সেই সম্পত্তির ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জল্পনা তৈরি হয়েছে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন